গাজীপুরঃ গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় দুইটি পরিবারের ওপর নৃশংস হামলার সঙ্গে জড়িত কিশোর গ্যাং ‘ডি কোম্পানি’র ওরফে ডেয়ারিং গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পি ও নীরব ওরফে ডন নীরবসহ ১২ জন সক্রিয় সদস্যকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। ছিনতাই, মাদকের কারবার, মারামারিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করতে এই গ্রুপে রয়েছে ৫০ জনেরও বেশি সদস্য। তাদের সবাইকে প্রতি সপ্তাহে পৃষ্ঠোপোষক লন্ডন বাপ্পি জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে সদস্যদের দিতেন। এছাড়াও নানা ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বাপ্পি প্রতিমাসে আয় করতেন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।
রোববার বিকেলে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত শনিবার (৫ জুন) মধ্যরাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা ও টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডেয়ারিং কোম্পানির নের্তৃত্বে প্রতক্ষ্যভাবে ছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পিসহ (৩৫) মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। গ্রেপ্তার আসামীদের দেওয়া তথ্যমতে টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে লন্ডন বাপ্পির আস্তানাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২টি বিদেশী পিস্তল, ২টি চাপাতি, ২টি রামদা, ৩টি লােহার রড এবং ১টি ছুরি উদ্ধার করে র্যাব-১।
গ্রেপ্তার অন্যান্যরা হলেন তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারী তানভীর (২৪), পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ (১৯), তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন (২১), রাজিব আহমেদ নীরব ওরফে টম নীরব (৩০), সাইফুল ইসলাম শাওন (২৩), রবিউল হাসান (২০), শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল (২৮), ইয়াছিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াছিন (১৮), মাহফুজুর রহমান ফাহিম (২২), ইয়াছিন মিয়া ওরফে প্রিন্স ইয়াছিন (১৯)। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে ১২ টি মােবাইল ফোন এবং নগদ ৬ হাজার ১৩০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
মামলা সুত্রে জানা জায়, গত ১ জুন গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর এলাকায় একটি ফুচকার দোকানে বসা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সেখানে বসে থাকা তুহিন ও তুষার নামে দুই যুবককে এলোপাতাড়ি ধাড়ালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ডেয়ারিং কোম্পানির গ্যাং গ্রুপের দুই সদস্য গুরুতর জখম করে। পরে এই ঘটনা বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ৩ জুন রাতে একই এলাকার একটি টেইলরের দোকানসহ বিভিন্ন বাড়িতে দেশীয় অস্ত্রদিয়ে হামলা চালায়। এতে টেইলাসের দোকানী মিসেস রূপালী তার স্বামী আরজু মিয়া ও অন্য একজন সুজন মিয়াকে কুপিয়ে যখম করে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে র্যাব ছায়া তদন্ত করে দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং গ্রুপ ডেয়ারিং কোম্পানির পৃষ্ঠপোষক ও লিডার নীরবসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ডেয়ারিং কোম্পানি নামে একটি গ্রুপ খুলে। সেই গ্রুপে গত ৫ বছর ধরে লন্ডন বাপ্পি সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে উত্তরা-টঙ্গীতে আধিপত্য বিস্তার ও নানা অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। এসব কাজে তার ছোট ভাই পাপ্পু তাকে সহযোগিতা করতো। ডেয়ারিং গ্রুপে অন্তত ৫০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের প্রত্যেককে প্রতি সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে দিতেন পৃষ্ঠোপোষক লন্ডন বাপ্পি। এছাড়াও নানা ধরণের কর্মকান্ডের মাধ্যমে বাপ্পি মাসিক আয় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা রয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা গ্রুপের অনেক সদস্যদের নাম-পরিচয় বলেছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি। পাশাপাশি এই গ্রুপের সব সদস্যদের ওপর র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। আমরা তথ্য পেয়েছি, রাজিব চোধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পির ছোট ভাই পাপ্পুর নামেও মামলা রয়েছে। সম্প্রতি একটি মারামারির ঘটনায় সেও কারাগারে রয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তার আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
কে এই বাপ্পি:
রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি (৩৫) টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ডেয়ারিং গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক। বাপ্পির গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। টঙ্গীতে সে তার নানা বাড়ি (লন্ডন হাউজ) বসবাস করেন। সে দুই বছর লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন। ২০১৩ সালে পড়াশোনা শেষে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন বাপ্পি। এরপর এলাকায় আধিপত্য ও ক্ষমতা বিস্তারের জন্য টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে ডেয়ারিং কোম্পানি নামে একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। গ্যাং গ্রুপ পরিচলনা করতে বাপ্পি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি গ্রুপ খোলে। মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তিনি মুলত এই গ্রুপটি পরিচালনা করে আসছিলো। গ্রুপের একটি লোগো তৈরি করে। কিশোর গ্যাংয়ে জড়িত হওয়ার কারণ ছিলো বাপ্পির পারিবারিক সমস্যা। ২০০৭ সালে বাপ্পির মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা পুনরায় বিয়ে করেন। এরপর থেকে বাপ্পি তার নানার বাড়িতে বসবাস শুরু করতো।
র্যাব জানায়, বাপ্পি ডেয়ারিং কোম্পানি গ্রুপের সদস্যদের মাঠ পর্যায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মঈন আহমেদ নীরব ওরফে ডন নীরবকে (২৪) দায়িত্ব দেয়। পুরো গ্যাংকে পৃষ্ঠপোষকতা করতো বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি। গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াাধীন রয়েছে।