যশোরঃ গত ৩৫ দিনে যশোরে ৪ হাজার ২শ’ জন নারী পুরুষ ভারত থেকে এসেছেন। বিশেষ অনুমতি নিয়ে তারা বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশে ফেরেন। যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান এই তথ্য জানান।
এদিকে, ভারত ফেরতদের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত ৪৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ১ জন ৬ মাসের ও ১ জন ১১ বছরের শিশু রয়েছে বলে সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে। আর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভারত ফেরতদের নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন পাওয়া যায়।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, গত ৩৫ দিনে ভারত থেকে বেনাপোল হয়ে দেশে ফিরেছেন ৪ হাজার ২শ’ জন বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রী। তাদের প্রত্যেকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ভারত ফেরত বাংলাদেশীরা প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বেনাপোলের রজনিগন্ধা, পোর্ট ভিউ, অ্যারিস্টোকেট, জুয়েল আবাসিক, চৌধুরী হোটেল, সিটি আবাসিক , নিশাত হোটেল, ফ্রেশ হোটেল, নাহিদ হোটেল, হোটেল সানসিটি, মৌ হোটেল, হোটেল সিটি, বেনাপোল পর্যটন মোটেল, রহমানিয়া হোটেলে , যশোর শহরের হাসান ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল নয়ন, ম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল, জাবের ইন্টারন্যাশনাল, আরএস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সিটি প্লাজা, হোটেল মিডওয়ে, হোটেল ম্যাগপাই, শেখ হাসিনা আইটি পার্ক, হোটেল মনিহার, হোটেল প্রিন্স, হোটেল বলাকা, হোটেল শাহরিয়ার, হোটেল সিটি, যশোর হোটেল, হোটেল সোনালী, ও ঝিকরগাছার গাজীর দরগাহ মাদ্রাসা। এছাড়াও খুলনা, মাগুরা ও ঝিনাইদহে আরও কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন রয়েছে। এছাড়া ভারত ফেরত নারীদের নিরাপত্তায় যশোর শহরের রেলরোডে জয়তী সোসাইটিতে আলাদা কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে নারী পুলিশ সদস্যের সাথে সেখানকার নারী কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন। আর করোনা পজেটিভ ও গুরুতর অসুস্থদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও বক্ষব্যাধিসহ অন্য হাসপাতালেরেফার্ড করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালের রেডজোনে মোট ৫৩ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে ভারত থেকে আসা রোগীর সংখ্যা ১৪ জন। বাকি ৩৯ জন স্থানীয়ভাবে করোনায় আক্রান্ত হন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জাহিদ জানান, জেনোম সেন্টার এই পর্যন্ত ভারত ফেরত ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় নতুন ধরন পাওয়া যায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, ভারত ফেরতদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪৭ জন। এরমধ্যে কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ জন। আর সংক্রমণ নিয়ে দেশে ফেরেন ১৩ জন। তিনি আরও জানান, ভারত ফেরতদের কারণে যশোর জেলা ক্রমেই আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ভারত ফেরতদের মধ্যে যশোর শহরের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে (আবাসিক হোটেল) দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্রের ছেলে বিমল চন্দ্র দে (৬০) ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার আব্দুল আওয়ালেরর স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৩৩)। এদের মধ্যে বিমল চন্দ্র ফুসফুসে ক্যান্সার ও আম্বিয়া কিডনী রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সিভিল সার্জন আরও জানান,ভারত ফেরতদের মাঝে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আবার স্থানীয়ভাবে প্রতিদিন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। সব মিলিয়ে যশোর জেলা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে দুই দেশের সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ভারতে আটকে থাকা বাংলাদেশিরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে দেশে ফিরছেন। জেলা প্রশাসন ভারত ফেরতদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দিচ্ছে।