হবিগঞ্জঃ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চলের গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহালসহ ৬ মৌজার লোকজন কর্তৃক পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গত রবিবার সকালে এ ঘটনাটি ঘটে। হামলাকারীরা নগদ টাকা, প্রায় ২ হাজার মন ধান, ৮টি টিউবওয়েল ১০/১৫ টি গরু, ১৫/২০ টি ছাগল, অসংখ্য হাঁস-মোরগ, লুটপাটসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এসময় হামলার শিকার হয়ে বাড়ি-ঘরে থাকা লোকজন পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচায়। এতে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে ১৪টি পরিবার। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব-৯ এর একাধিক টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। এ ঘটনায় ১৩ নং পানিউন্দা ইউনিয়নবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন (বীর প্রতীক)-এর মালিকানাধীন ফিশারিতে অবস্থানরত পাহারাদার ও তার স্ত্রীকে মারধর করে নোয়াগাঁও গ্রামের কতিপয় লোকজন। আহত দম্পতি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামসহ ৬ মৌজার লোকজন মিটিং ও মাইকিং করে কথিত প্রভাবশালীদের নির্দেশে প্রায় ৩ কিঃ মিঃ দুরত্বে আরেকটি ইউনিয়নে অবস্থিত নোয়াগাঁও গ্রামে দেশীয় অস্ত্র সহকারে হামলা করার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন ও নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ডালিম আহমদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষের লোকজনদের নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রাম থেকে একটু দুরবর্তী স্থানে মিটিং করেন। মিটিং চলাকালে সাতাইহাল ৬ মৌজার প্রায় ২ শহস্রাধীক লোক বিকল্প রাস্তায় নোয়াগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুরসহ তান্ডবলীলা চালায়। এক পর্যায়ে তারা বাড়ি ঘরে অগ্নি সংযোগ করে প্রায় ২ হাজার মন ধান, ১০/১৫টি গরু, ১৫/২০টি ছাগল, অসংখ্য হাঁস মোরগ বাড়ি থেকে লুট করে নিয়ে যায়।
লুটপাট কারীররা উল্লেখিত বাড়িগুলি থেকে ৮টি টিউবওয়লের পাম্প খুলে নিয়ে যায়। এছাড়া অগ্নি সংযোগের ফলে নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত সফর উল্লার পুত্র রমজান মিয়া, হেলাল মিয়া, লুৎফুর মিয়া, সাদ্দক মিয়া, কামাল মিয়া, মাদ্দক মিয়া, হিরন মিয়া, মৃত আরজু মিয়ার পুত্র আব্দাল মিয়া, মৃত আবরু মিয়ার পুত্র আফজল মিয়া, আওলাদ মিয়া, তাজুদ মিয়া, আজাদ মিয়া ও সফর উল্লার পুত্র মুহিবুর রহমানের ১৪টি পাকা-আধা পাকা, টিনসেটের বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে ধান-চালসহ ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে যায়। এঘটনায় ক্ষতির পরিমান প্রায় কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ও র্যাব-৯ এর একাধিক টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ১৩নং ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইজাজুর রহমান বলেন, সাতাইহাল ৬ মৌজার মানুষ এত দুর থেকে এসে নোয়াগাঁও গ্রামে ঢুকে যে তান্ডব চালিয়েছে তা দুঃসাহসিক ও খুবই দুঃখ জনক। তাদের তান্ডবের সময় ধান, চাল, গরু, ছাগল, হাঁস- মোরগ এমনকি মোরগের ডিম পর্যন্ত লুটপাট করা হয়েছে। ১৪টি ঘর সম্পুর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে ঠাঁই নিয়েছেন ওই পরিবারগুলো।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দীন আহমেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক, সকাল থেকেই ঘটনার খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থলে ছিল। কিন্তু হামলাকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনের সাথে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এধরনের হামলা করে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক ইসরাত জাহানের নির্দেশে রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন পুনঃরায় ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন এবং স্থানীয় একটি বাড়িতে খাবার প্রস্তুত করে তাদের মধ্যে রাতের খাবার পরিবেশন করেন।
নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ ডালিম আহমদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।
এদিকে এমন নিন্দনীয় ঘটনায় নবীগঞ্জ উপজেলার সর্ব মহলে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বইছে। দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল। এদিকে এ নারকীয় তান্ডবের খবর পেয়ে রবিবার বিকেলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাহ (বিপিএম, পিপিএম বার) পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলে ন্যায় বিচারের আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেন।
এদিকে রবিবার দিবাগত রাত থেকে আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭ দাঙ্গাবাজকে আটক করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ বলেন এ ঘটনায় জড়িত ৭জনকে আটক করা হয়েছে অন্যান্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।