Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনা আর লকডাউনে ঈদেও দর্জিদের বেকার সময় পার


আগামী নিউজ | নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ (নারায়নগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৮, ২০২১, ১২:২৪ পিএম
করোনা আর লকডাউনে ঈদেও দর্জিদের বেকার সময় পার

ছবিঃ আগামী নিউজ

নারায়নগঞ্জঃ মোহাম্মদ হাসান। মাদ্রাসা ছাত্র। প্রতি বছরই রোজায় দর্জি দিয়ে পায়জামা পাঞ্জাবী বানান। এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে সব দর্জি দোকান বন্ধ থাকায় বাড়ির মহিলা দর্জিই তার ভরসা। তিনি বলেন, “কি আর করব। ঈদ তো এসেই পড়ল। দর্জিরা দোকান খুলে না। তাই মহিলা দর্জি দিয়া বাড়িতেই পায়জামা পাঞ্জাবী বানাইলাম”।

রোজার বেশ কিছু দিন আগে থেকেই এ সময় দর্জিদের ব্যস্ততাটা বেড়ে যেত। কারিগররা দম ফালানোর ফুসরত পেত না। কেউ ১০ রোজা, কেউবা ১৫ রোজার পরে কোনো অর্ডার নিত না। সারাটা রমজানজুড়েই দর্জি বাড়িতে বেজায় ভীড় থাকত। এ বছর এসব দৃশ্য শুধুই স্মৃতি। দর্জি বাড়িতে নেই কোনো কোলাহল। নেই কোনো ব্যস্ততা। দর্জি কারিগরদের অলস সময় কাটছে এখন। ব্যস্ত দর্জি বাড়িতে এখন সুনশান নীরবতা। করোনায় সব শেস করে দিল বলে জানান, দর্জি বাড়ির কর্মীরা।

তবে বাড়ি বাড়ি মহিলা দর্জিরা কিছুটা কাজ করছেন। ঈদ সামনে রেখে রমজানের শেষ দিনগুলোতে বছরের ব্যস্ততম সময় কাটে রূপগঞ্জে দর্জিদের। কিন্তু কাজের চাপে হিমশিম খাওয়া সেই চিরচেনা চিত্র এবার দর্জিপাড়ায় নেই। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের মধ্যে ভরা মৌসুমেও অলস ও কর্মহীন অভূতপূর্ব সময় পার করছেন দর্জিরা। এ পেশায় থাকা স্থানীয় দর্জিরা বলছেন, এমন সময় কখনই আসেনি তাদের।

বছরজুড়ে কাজ কম থাকলেও ঈদে প্রচুর কাজ পেতেন তারা। কাজ না থাকায় দোকান ভাড়া দিতে না পারার কথা বলছেন তারা, চলতেও হচ্ছে ধার করে; কর্মহীন হয়ে পড়ায় ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত তারা। উপজেলার মুড়াপাড়া বাজার, কায়েতপাড়া বাজার, নগরপাড়া বাজার ও গাউছিয়া মার্কেটের দর্জিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাতে গুণে দু-চারটি কাজ পাচ্ছে টেইলার্সগুলো। পোশাক ও টেইলাসের আধুনিক টেইলর্স অ্যান্ড ফেব্রিক্সের মালিক পরিমল চন্দ্র বলেন, এরকম ঈদ আসবে, কখনও ভাবেননি । “আমরা কেন, কেউই এমনটা দেখেনি। প্রতি ঈদেই প্রত্যাশা থাকে, কিন্তু এবার পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা ধরেই নিয়েছি কাজ একেবারেই কম হবে। টুকটাক কাজ হচ্ছে। আর যাদের খুব জরুরি দরকার, তারা অর্ডার দিচ্ছে।”

এক দশকের বেশি সময় ধরে আধুনিক টেইলার্সে কর্মরত মিন্টু বলেন, “নিজেদের ও কর্মচারীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষার বিষয়টা মাথায় রেখেই আমরা কিছু কাজ করছি। একেবারে কাজ না করলে স্যালারি দেওয়াটাই কঠিন হয়ে পড়ে।” কাটিং মাস্টার  মানিক মিয়া পনের বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন পোশাক তৈরির এই পেশায়।

গাউসিয়ার শতরূপা লেডিস টেইলার্সের কর্ণধার কর্মহীন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি আগে কখনও। তিনি বলেন, “ ঈদটা এভাবে কাটবে, স্বপ্নেও ভাবি নাই। উল্টা আশা কইরা রইছিলাম, এইবার আগের বারের চেয়ে বেশি কাজের অর্ডার নিব। কাউকে ফিরায় দিব না। বছরের সবচেয়ে বেশি ইনকাম তো এই সময়টায়ই।” লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ থাকায় জমানো টাকাও ফুরিয়ে এসেছে তার। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে আশংকায় রয়েছেন তিনি। “অনেকে তো বাসায় কাজ করে। কিন্তু আমার ঘরে কোন মেশিনও নাই, বাসার আশপাশের কয়েকজন কাপড় বানায় দেয়ার কথা বলছে। কিন্তু সেই উপায়ও তো নাই। এমন দিন দেখতে হবে কোনদিন ভাবি নাই। খুব কষ্টে চলতে হচ্ছে। সামনে কী হবে, কে জানে?"

নগরপাড়া মার্কেটের এক দর্জি ইউসুফ মার্কেট খুলে দেয়ার কয়েকদিন পর দোকান খুললেও ক্রেতা না পাওয়ায় দোকান বন্ধ রেখেছেন। তিনি বলেন, “মার্কেট খুলে দেয়ার পর অনেক আশা করে দোকান খুলছি যে, ঈদে তো কিছু কাজ পাব। কিন্তু কোন কাজই পাই নাই। কাস্টমার আসে না। তাই বন্ধ করে দিছি।” বাসায় সেলাই মেশিনসহ পোশাক তৈরির সরঞ্জাম থাকায় কিছু কাজ করতে পারছেন ইউসুফ। দোকানের তিন মাসের ভাড়া বাকি থাকলেও নিজের কর্মচারীকে টাকা দিয়ে চালাতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জাঙ্গীরের জনতা টেইলার্সের  মালিক আক্তার হোসেন নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দোকান বন্ধ রেখেছেন।

তিনি বলেন, “এখন দোকান খোলা থাকলে কিছু কাজ হয়ত পেতাম, কিন্তু কাস্টমাররা একেকজন একেক মার্কেট থেকে কাপড় কিনবে। যে কারও মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। আর আমি আক্রান্ত হলে আমার পরিবারও আক্রান্ত হবে। সে কারণে একেবারে অফ রাখছি। “একবছর কাজ না করে কম খাই, কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকি। করোনাভাইরাসের কারণে যদি জান নিয়ে টানাটানি হয়, সেইটার চেয়ে তো এইটাই ভাল।” জমানো টাকা না থাকলেও আত্মীয়দের সহায়তায় চলছেন বলে জানান তিনি।

তবে শপিং মল বা মার্কেটের তুলনায় পাড়া-মহল্লার দর্জিরা কিছুটা কাজ পেয়েছেন। লক্ষন সরকার বলেন, লকডাউনের প্রথম থেকে দোকান একেবারে বন্ধ রাখছিলাম। ঈদে কিছু কাজ পাব, তাই আবার খুলছি। কিন্তু আমি যে ধারণা করছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ পাইছি। “আমাদের তো বাড়ি ভাড়া, দোকান ভাড়া দিয়ে চলতে হবে। তাই কাজ না করে উপায় নাই। যদি চলতে পারতাম, তাহলে ঘর থেকে বেরই হতাম না।"

“ঈদে তো অন্যান্য বার দামি দামি ড্রেস বড় টেইলারে অর্ডার দিত। এবার সবাই সাধারণ পোশাকই বানাচ্ছে। বাচ্চাদের পোশাকই বেশি।” নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই কাজ করার চেষ্টা করছেন তারা, মাস্ক ব্যবহার করছেন সব সময়।

আগামীনিউজ/এএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে