ঢাকা: প্রচন্ড তাপদাহের কারণে চলছে শুষ্ক মৌসুম। তার উপর অনাবৃষ্টিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় হাজার হাজার নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ায় ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় নলকূপে উঠছে না পানি। সামান্য পানি উঠলে সময় লাগছে বেশ। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
এই চিত্র ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় ১৪ টি ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো ইউনিয়নেই। এতে বিভিন্ন স্থানে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবাবগঞ্জ উপজেলায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের জন্য ২১ হাজার ৫০০ টি আর্সেনিক মুক্ত নলকূপ ও ১ হাজার ৫০০ টি আর্সেনিকযুক্ত নলকূপ রয়েছে। কিন্তু গত এক মাস ধরে বেশিরভাগ নলকূপ থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রতিটি বাসা বাড়িতেই পানির অভাবে দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে বৈদ্যুতিক মটর দিয়ে অনেকেই পানি উত্তোলন করে সংগ্রহ করে রাখছেন। কেউ আবার পানির অভাব পূরণ করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্তে ছুৃটাছুটি করছে পানি সংগ্রহ করতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো কোনো স্থানে পানি থাকলেও নলকূপের হাতল চেপে এক লিটার পানি তুলতে অনেক সময় লাগছে। ফলে সেসব নলকূপে সারা দিন মানুষের লাইন লেগেই থাকছে। এই উপজেলার পূর্বাঞ্চলের সব গুলো নলকূপ ছিলো আর্সেনিক যুক্ত। সরকারি ভাবে আর্সেনিক মুক্ত নলকূপ প্রতি এলাকা একটি বা দুটি করে স্থাপন করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের জন্য দুই একটি নলকূপ পানির অভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আর্সেনিক মুক্ত নলকূপ স্থাপন করতে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা লাগে তাই সবার পক্ষে সম্ভব নয়। ব্যক্তিগতভাবে নলকূপ স্থাপন করা। যাদের ব্যক্তিগত নলকূপ রয়েছে তারাও ভুগছে নানা সমস্যায়। তবে অবস্থা সম্পূর্ণ ব্যক্তিরা বর্তমানে পানি সংকট মোকাবেলায় অনেক টাকা ব্যয়ে সাব-মারসিবল পাম্প স্থাপন করে পানি তুলছেন। এটি স্থাপন অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় সবার পক্ষে এটি স্থাপন করা সম্ভব নয়। অনেক স্থানে নলকূপে পানি না ওঠায় বাসা বাড়িতে গোসল, রান্নাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির জন্য মসজিদে মসজিদে নামায শেষে বৃষ্টির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলায় গত নভেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত কোনো বৃষ্টি হয়নি। তাই ১৪টি ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এ কারণে বাড়িতে বসানো অগভীর টিউবওয়েল থেকে ঠিকভাবে পানি উঠছে না।
মহল্লায় থাকা গভীর নলকূপ থেকে লাইন ধরে খাবার ও রান্না-বান্নার জন্য পানি আনতে হচ্ছে। এদিকে বেশির ভাগ পুকুরের পানি তলানিতে থাকায় গোসল করতে গিয়েও বিপাকে পড়ছেন এলাকাবাসী। সংকটের এই সময়ে আবাসিক ভবনগুলোতে পানির অপচয় বেশি হচ্ছে। অনেকের পানির ট্যাংকি ভরে পানি উপচে পড়েছে সেই দিকে নজর নেই অনেক বিত্তবান মানুষের।
নবাবগঞ্জ বাজারের নলকূপ ব্যবসায়ী শাহ্ জাহান মিয়া বলেন, রমজানের শুরু থেকে পানির এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমি প্রতিদিন অনেক জায়গা থেকে ফোন পাচ্ছি। তাদের অভিযোগ আপনি কেমন কল দিছেন নষ্ট হয়ে গেছে। সবাইকে আমার বুঝাতে হচ্ছে অনাবৃষ্টির কারণে এই সমস্যা হচ্ছে।
বাগমারা বাজারের ব্যবসায়ী তারেক হোসেন বলেন, ইফতার করতে পানির কোনো বিকল্প নেই। তাই ইফতারের আগে সরকারি নলকূপ গুলোতে পরে উপচে পড়া ভীড়। অনেকেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়েও পানি পাচ্ছেনা। দোকানে ইফতারের আগে নলকূপে পানি তুলতে গিয়ে পানি না পেয়ে অবশেষে ৫ লিটার পানি কিনে ইফতার করেছি। নলকূপে পানি অনেক কম উঠে। আশা করছি বৃষ্টি হলেই এই সংকট কমে যাবে।
আমিরপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজন মিয়া বলেন, আমার ৫০০ লিটারের পানির ট্যাংকি ভরতে এখন প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। আগে যা ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে ভরে যেতো।
উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের বাসিন্দা লিপি আক্তার বলেন, তাঁদের বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলে মাসখানেক ধরে ঠিকভাবে পানি উঠছে না। কারণে মোটর দিয়ে পানি উঠিয়ে কোনো রকম কাজ চালাচ্ছি। তবে পানির টাংকি ভর্তি করতে অনেক সময় লাগে।
বক্সনগর ইউনিয়নের বালুরচর গ্রামের বাসিন্দা দীপা মন্ডল জানান, আমাদের বাড়ির কল দিয়ে জল পাচ্ছি না তাই বাধ্য হয়ে পাশের গভীর নলকূপ থেকে সিরিয়াল ধরে জল আনতে হচ্ছে। নলকূপ চেপে পানি উঠানো এখন অনেক কঠিন। গভীর নলকূপ থেকে পানি ওঠানোর সময় প্রচুর শক্তি প্রয়োগ করতে হচ্ছে। ৫০টি চাপেও ছোট এক কলস পানি ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এলাকায় দুইটি মাত্র গভীর নলকূপ হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে পানি নিতে হচ্ছে।
উপজেলা সদর কলাকোপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহীম খলিল জানান, এটি একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এলাকায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমার জানা মতে এমন সমস্যা পূর্বে কখনও হয়নি। এইবার যেহেতু আমরা বিপর্যয়ে পড়েছি সেহেতু পরবর্তিতে যাতে অন্তত নলকূপ স্বল্পতার কারণে সমস্যায় না পড়তে হয় সেই বিষয়ে নজর দিবো। আরও বেশি বেশি আর্সেনিক মুক্ত নলকূপ স্থাপনের জন্য যা করা লাগে করবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাহীদুজ্জামান বলেন, প্রায় ছয় মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না। তীব্র খরায় ধানক্ষেত ফেটে যাচ্ছে। ফলে কৃষকদের তিন-চার দিন অন্তর অন্তর সেচ দিতে হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ একটু বেড়েছে। তবে তেমন কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে না তারা।
আগামীনিউজ/নাহিদ