Dr. Neem on Daraz
Victory Day

রাঙ্গামাটিতে মাশরুমে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি, প্রণোদনা ও ঋণের দাবী


আগামী নিউজ | রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২১, ১০:২২ এএম
রাঙ্গামাটিতে মাশরুমে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি, প্রণোদনা ও ঋণের দাবী

রাঙ্গামাটিঃ বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ, দীর্ঘদিনের লকডাউন ও প্রচন্ড তাপদাহে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলাধীন ঘাগড়া মহাজন পাড়ার চাষী ধনমনি চাকমা মাশরুম চাষ উৎপাদনে গত ২ মাসে আনুমানিক ৬/৭ লক্ষাধিক পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। গত ৫/৬ দিন ধরে প্রচন্ড গরমে তাপদাহে মাশরুমের বীজ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অচলাবস্থা চলতে থাকলে পরিবারের স্বাবলম্বী হওয়া কথা দূরে থাক, সংসারে ভরন পোষণে কঠিন হয়ে পড়তে হবে বলে কান্নার কন্ঠে জানান।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ধনমনি চাকমা তার নিজ বাড়ীর একপার্শ্বে  দীর্ঘ ৩/৪ বছর ধরে মাশরুম ও আদা-হলুদের চাষ করছেন। আদা-হলুদ চাষে পরিবহন, দৈনিক দিন মজুরির খরচ বেশী অনেকটা অর্থের ব্যয়বহুল। তাছাড়া প্রচুর সময়ের ব্যাপার সেজন্য পরিশ্রমের কারনে সেদিকে তেমন ঝুঁকি নিতে চাননি। হঠাৎ একদিন পরিচিত এক বন্ধুর সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়ে মাশরুম চাষের বিষয়ে আলাপচারিতা হয়। একপর্য়ায়ে বন্ধুর পরামর্শে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষন নিতে বলেন। এতে মাশরুম ও কৃষি বিষয়ক উপর প্রশিক্ষন গ্রহণ করে অল্প পুঁজি ব্যয় করে আদা-হলুদ, হাই ব্রিড পেঁপে চাষসহ আরো ১/২টি চাষের উপর ঝুঁকি নেন। কিন্তু এসব চাষে কোনটিই স্বাবলম্বী হতে পারেননি। এক পর্যায়ে শেষ বেলায় এসে বাড়ী আঙ্গিনায় ছোটখাটো জাগয়া নিয়ে মাশরুম চাষে পুরো পরিবার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। বীজ সংগ্রহে বেশ কয়েকটি নার্সারী ও দোকানদারদের কাছ থেকে ৩/৪শত মাশরুমের বীজ কিনে চাষ করতে থাকেন। এরপর জেলা, উপজেলা ও ঢাকায় সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে ভালোমানের বীজ সংগ্রহ করে আস্তে আস্তে মাশরুমের চাষকে এগিয়ে নিতে প্রচুর শ্রম, অর্থ যোগান দিয়ে এগুতে থাকে। যা কয়েকমাস পর তার কষ্টে গড়া মাশরুম চাষ থেকে উৎপাদন শুরু হতে থাকে। কোভিড-১৯ আসার আগ পর্যন্ত এভাবে গত একবছর যাবত পর্যাপ্ত পরিমাণের অধিক উৎপাদন চলতে থাকে। কিন্তু গত বছরের মার্চ মাস থেকে হঠাৎ করোনার মহামারীতে দেশে লকডাউনে অচলাবস্থা হয়ে পড়ে। তারপরও চাষী ধনমনি চাকমা মাশরুম চাষের আস্থা রেখেই উৎপাদনে থেমে থাকেননি। পুরো দেশ লকডাউনে থাকায় কিছুটা ব্যবসার মন্দাভাব দেখা দিলেও মাশরুম চাষে পুরো পরিবারটি এ চাষের উপর বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে চলেছেন। যেমনটি পরিশ্রম করেছেন ঠিক তেমনিতেই প্রতিমাসে কমপক্ষে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন বলে জানান। বলতে গেলে স্বাবলম্বী হতে চলেছেন। বর্তমানে কয়েকটি স্থানে মাশরুম চাষ করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেছেন, গত বছরের তুলনায় এবছরে তাপমাত্রা অনেকটা বেশী। মাশরুম চাষে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় চাষ করতে হয়। অল্প তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ঐ বীজ গুলো পচন ধরে কিংবা গরমে শুকিয়ে গেলে বীজ নষ্ট হয়ে যায়। যেকারনে যত বেশী ঠান্ডার আর্দ্রতা কম হবে ততোবেশী মাশরুমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এমনিতে দেশে লকডাউন আর ব্যবসার বাণিজ্যর মন্দাভাব। এদু’টিই মিলে বর্তমানে তার মাশরুম চাষে গত দুইমাসে প্রায় ৬/৭ লক্ষাধিক পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দৈনিক উৎপাদন প্রায় ২৫-২৮ কেজি। দিনের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে অনেক সময় বেশী উৎপাদন হত। কেজি প্রতি ৩০০-৩৩০ টাকা হারে বিক্রি হতো। তবে গত দু’মাসে লকডাউন ও তাপমাত্রার প্রভাবে দৈনিক ৬-৮ কেজি উৎপাদন হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। এদিকে করোনাকালীন সময়ে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার ঘোষণা থাকলেও  ব্যাংক ও সরকারী তরফ থেকে কোন কিছু প্রদান করেননি বলে অভিযোগ করেছেন। অন্ততপক্ষে প্রণোদনা না দিলেও কৃষি ভিত্তিক এসএমই লোন হিসেবে সুদ মুক্ত ব্যাংক লোন পাওয়ার জন্য সরকারের নিকট সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।

এদিকে জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে আগামী নিউজ প্রতিবেদককে বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারী ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে বর্তমান করোনাকালীন মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বর্তমান সরকার যথেষ্ট পরিমাণ সুদ মুক্ত লোন, সরকার কর্তৃক প্রণোদনা প্রদান করেছেন। এসব কিছুই ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগযোগ সমম্বয় করা প্রয়োজন। তাছাড়া উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেই আলোচনা সাপেক্ষে আবেদন করিতে হবে। সুর্নিদিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্রদানের ব্যাপারে প্রচেষ্টা করা হবে।

আগামীনিউজ/জনী

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে