যশোর: ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রেডজোন থেকে পালিয়ে যাওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১০ রোগীর হদিস মিলেছে। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে উদ্ধারের পর ফের হাসপাতালে ভর্তি করছেন।
সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত ৪ জনকে রেড জোনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গভীর রাতের মধ্যে বাকি ৬ জনকে হাসপাতালে আনা হবে। এদিকে, রেড জোন থেকে করোনা রোগী পালিয়ে যাওয়ার জন্য গেটের তালা খোলা ও নিরাপত্তা কর্মী না থাকাকে দায়ী করেছেন। করোনা রোগীরা জানিয়েছেন, শারীরিক জটিলতা না থাকায় তারা হাসপাতাল থেকে চলে যান। তারা হোম আইসোলেশনে ছিলেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, চলতি মাসে ভারত ফেরত ২৭ জন করোনা রোগীকে হাসপাতালের রেডজোনে পাঠানো হয়। ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিলের ভর্তি হওয়া ১০ জন রোগী পালিয়ে যান। এরমধ্যে ৭ জন ভারত ফেরত রয়েছেন।
পালিয়ে যাওয়া রোগীরা হলেন যশোর শহরের পশ্চিম বারান্দীপাড়ার বিশ্বনাথ দত্তের স্ত্রী মনিমালা দত্ত (৪৯), ওয়াপদা গ্যারেজ এলাকার ভদ্র বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস, (৩৭), সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (১৯), একরামুল কবীরের স্ত্রী রুমা খাতুন (৩০), সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপপাড়ার জালাল হোসেনের ছেলে মিলন হোসেন (৩২), কালীগঞ্জ উপজেলার মনোতোষ সর্দারের স্ত্রী শেফালী রানী (৪০), রাজবাড়ীর রামকান্তপুর গ্রামের গোলাম রব্বানীর স্ত্রী নাসিমা আক্তার (৪৯), খুলনা সদর উপজেলারকলিম কৃষ্ণের ছেলে বিবেকানন্দ (৫২), রুপসা উপজেলার শের আলীর ছেলে সোহেল সর্দার (১৭) ও পাইকগাছা উপজেলার ডামরাইল গ্রামের আহমেদ সানার ছেলে আমিরুল সানা (৫২)।
এদের মধ্যে মনিমালা দত্ত, মিলন হোসেন, শেফালী রানী, আমিরুল সানা, সোহেল সর্দার বিবেকানন্দ সরকার ও নাসিমা আক্তার ভারত ফেরত ছিলেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, ভারত ফেরত ৭ জনসহ মোট ১০ জন করোনা রোগী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। রেড জোনে বসবাসের উন্নত ব্যবস্থা থাকার পরও কেনো তারা পালিয়ে গেলেন এটা বোধগম্য নয়। পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হয়। এছাড়া ১০ জন রোগীর নাম ঠিকানার তালিকা সরবরাহ করা হয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। বাজবাড়ীর রোগী নাসিমা আক্তারকে পাওয়া গেছে কুষ্টিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ি। পলাতক ১০ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। এদিকে, রেডজোনে দায়িত্বরত সেবিকারা জানান, সোমবার রাত ৯ টা পর্যন্ত পলাতক ১০ জনের মধ্যে ৪ জনকে উদ্ধার করে রেডজোনে ভর্তি করেছে প্রশাসন। তারা হলেন মনিমালা দত্ত, প্রদীপ বিশ্বাস , রুমা খাতুন ও ফাতেমা খাতুন।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, তিনি পলাতক কয়েকজন করোনা রোগীর সাথে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, শারীরিকভাবে তেমন জটিলতা না থাকায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে গেছেন। তবে তারা হাসপাতাল থেকে ফিরেই হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। সূত্র জানিয়েছে, করোনা ওয়ার্ডে নার্স ও চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালনের জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছেন। তবে গেটে নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্ব নেই। তাছাড়াও গেট তালাবদ্ধ না করে খোলা রাখা হয়। এই সুযোগে করোনা রোগীরা ওয়ার্ড রেড জোন থেকে পালিয়ে গেছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, হাসপাতাল থেকে করোনা রোগী পালিয়ে যাওয়া হলো তাদের অসচেতনতা। সচেতন মানুষ কখনো এটা করতে পারেনা। এমনিতেই জেলায় করোনার প্রকোপ চলছে। এই সময়ে তাদের পালিয়ে যাওয়া অবশ্যই ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাদেরকে হাসপাতালে ফের ভর্তি করা হবে। সিভিল সার্জন আরও জানান, করোনা রোগী পালিয়ে যাওয়ার পর রেডজোনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের একটি টিম সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ককে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন আরও জানান, ভারত থেকে ফেরা করোনা রোগীদের রেডজোনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত ১৮ এপ্রিলের পর থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১৯ জন করোনা রোগীকে জেনারেল হাসপাতালের রেডজোনে পাঠানো হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম জানান, পলাতক ১০ জন করোনা রোগীর হদিস মিলেছে। তাদের নাম ঠিকানার তালিকা পাওয়ার পর তা স্ব স্ব এলাকার সিভিল সার্জন ও পুলিশ বিভাগকে জানানো হয়। পরে তাদের উদ্ধারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে উদ্ধার করে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাতের মধ্যে বাকিদের হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে আশাবাদী এই পুলিশ কর্মকর্তা।
আগামীনিউজ/নাহিদ