Dr. Neem on Daraz
Victory Day
আতিয়া আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় দুই মাসেও

গ্রেফতার হয়নি আসামী, বাদীর প্রাণনাশের হুমকি!


আগামী নিউজ | রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২১, ০৫:৪৯ পিএম
গ্রেফতার হয়নি আসামী, বাদীর প্রাণনাশের হুমকি!

ফাইল ছবি

সিরাজগঞ্জ: জেলার সলঙ্গা থানার কালিকাপুর গ্রামের অসহায় নারী মোছাঃ মমতা বেগমের মেয়ে আতিয়া খাতুন (২২) এর মৃত্যুতে সলঙ্গা থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও আটক হয়নি কোনো আসামী। বরং মামলার বাদী আতিয়ার মা মোছাঃ মমতা বেগমকেই মামলা তুলে নিতে জন সম্মুখে মারধর ও প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে বলে সাংবাদিকের নিকট অভিযোগ করেছেন মামলার বাদীনি।

তিনি বলেন, “মামলা তুলে নে নয়তো তোকেও তোর মেয়ের কাছে পাঠিয়ে দিবো” মর্মে আমাকে অবিরত প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে চলেছে। ২নং আসামী মানিক মিয়ার বাবা মোঃ ওহাব আলী এলাকার চিহ্নিত সুদের কারবারি হওয়ায় টাকার জোড়ে ও ক্ষমতার দাপটে এই সকল কাজের মুল হোতা হিসাবে কাজ করছেন বলেও জানা গেছে। এখন মেয়ের মৃত্যুর বিচার পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় মা মমতা বেগম। এছাড়াও বাজারের মধ্যেই ২নং আসামী মানিক মিয়ার ফুফু জয়নব, জয়গন, জহুরা ও হাফিজা, সবার সামনে আমাকে মেরে মামলা না তুললে আমাকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দিয়ে গেছেন বলে জানান মামলার বাদীনি মোছাঃ মমতা বেগম।

দিন আনা দিন খাওয়া একজন মা নিজে অন্যের বাড়িতে বা মাঠে কাজ করে খেয়ে না খেয়ে স্বামীহীন মেয়েকে আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আগলে রাখতে পারেননি তিনি। মেয়ের মৃত্যুর পরে মামলা করেছি সেটাও প্রায় দুই মাস হয়ে গেলো তবুও এখনো আটকও হয়নি কোনো আসামী। এখন তো আসামীর লোকজন এসে আমাকে সবার সামনে মারধোর করে বলে গেছে “মামলা তুলে নে নয়তো তোকেও তোর মেয়ের কাছে পাঠিয়ে দিবো”  ২২বছরের মেয়েকে হারিয়ে শোকে কাতর মা  অঝরে কাদতে কাদতে এভাবেই বলছিলেন সাংবাদিকদের নিকট। 

তিনি আরও বলেন, এখন আমি নিজেই প্রাণ সংকটে আছি। এবং আসামীদের গ্রেফতার না হওয়ায় তার এই আতংক যেন আরো কয়েকগুন বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য মহের আলী নিজেও আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ওরা প্রয়োজনে ৫লাখ টাকা থানায় ফুরাবে তবুও তোর মেয়ের মৃত্যুর কোনো বিচার হবেনা। তুই যা পারিস কর। কথা গুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের দক্ষিন কালিকাপুর গ্রামের মো. আঃ কুদ্দুসের স্ত্রী ও মৃত আতিয়া খাতুন (২২) এর মা মোছাঃ মমতা বেগম।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছর পূর্বে মামলার বাদিনী মোছাঃ মমতা বেগম এর মেয়ে আতিয়া খাতুন এর সাথে পারিবারিক ভাবে উল্লাপাড়া থানার বয়ড়া গ্রামের মহের আলীর ছেলে সাবের আলী (৩২) এর প্রথম স্ত্রী থাকা শর্তেও দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই ১নং আসামী সাবের আলী আতিয়াকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকায় মেয়ে মা’র কাছে এসে থাকতো। আমার বাড়িতে থাকার সুবাধে মেয়ের মৃত্যুর এক দুইমাস আগে থেকে ২নং আসামী দক্ষিন পুস্তিগাছা গ্রামের মো; ওহাব আলীর ছেলে মানিক মিয়া (২৬) এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এর প্রেক্ষিতে মানিক মিয়া প্রায়ই মেয়ের বাড়িতে যাতায়াত করিতো। মেয়ের মা মমতা বেগম একাধিকবার মানিককে না আসার জন্য বললেও শুনতেন না মানিক। আসামী মানিক মিয়া আতিয়া মারা যাবার ৭-৮দিন পূর্বে আতিয়াকে বাড়ি হতে বাহির করে নিয়ে যায়। বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে মেয়েকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনার প্রেক্ষিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে মানিক মিয়া আতিয়াকে ফুসলাইয়া বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সলঙ্গা থানাধীন হাটিকুমরুল গোলচত্বরে আসতে বলে। আতিয়া মানিকের কথানুযায়ী সরল বিশ্বাসে সকলের অগচরে বাড়ি হতে নগদ ৫ হাজার টাকা এবং একটি ৪আনা ওজনের স্বর্নের চেইন সহ আরো কিছু জিনিস নিয়ে বাড়ি থেকে হাটিকুমরুল গোলচুত্বর এলাকায় গিয়ে মানিক মিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। তখন মানিক মিয়া আতিয়ার নিকট থেকে সুকৌশলে সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু মানিক তাকে চলে যেতে বলে।

সে অবস্থায় আতিয়া খাতুন কোনও উপায় না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যেয়ে ১ ও ২নং আসামীর এমন মানসিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে সেদিনই (২২ ফেব্রুয়ারি ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কালিকাপুর বাবার বাড়িতে সকলের অগচরে গ্যাস ট্যাবলেট (বিষাক্ত ওষুধ) খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন বুঝতে পেরে দ্রুত সলঙ্গা থানাধীন হাটিকুমরুল শাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে আতিয়ার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় আতিয়াকে দ্রুত সেখান থেকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

পরে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিঃসক আতিয়াকে দ্রুত বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য বলে। পরবর্তীতে আতিয়াকে বগুড়া নেয়ার পথে এম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়। তার এই অকাল মৃত্যুর জন্য আতিয়ার মা মমতা বেগম, মোঃ সাবের এর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন এবং মানিক মিয়ার প্ররোচনায় গ্যাস ট্যাবলেট খেতে বাধ্য হয় মর্মে তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য তাদেরকেই দায়ী করেন। 

সলঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক ও উক্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ রাসেল মিয়া বলেন, আমাদের দিক থেকে আসামী ধরার চেষ্টা অব্যাহত আছে তবে আসামী কোথায় আছে তা নির্দিষ্ট করা যাচ্ছেনা। যেহেতু এটা একটা স্পর্শকাতর মামলা তাই আমরাও চেষ্টা করছি দ্রুত আগামীদের আটক করে আইনের আওতায় আনতে। তবে বাদীর দিক থেকে আসামীর স্থান সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে সুবিধা হয়।

সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আঃ কাদের জিলানী বলেন, এই মামলার তদন্ত চলছে ও চার্জশীট প্রক্রিয়াধীন আছে। দ্রুতই চার্জশীট দেয়া হবে তবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করেও আসামী ধরা যাচ্ছে না। আসামী ধরতে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে।

আগামীনিউজ/নাহিদ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে