রাজশাহী: জেলার বাগমারা উপজেলায় আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু (৬০) নামে মসজিদের সাবেক এক ইমামের বিরুদ্ধে বিবাহিতা তিন স্ত্রী রেখে অন্যের বউ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়া হলে ১১ দিনেও সন্ধান মেলেনি তাদের। তবে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে থানার ওসি উল্টো পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পালিয়ে যাওয়া ওই নারীর ছেলে। তাই সাবেক ওই ইমামকে ধরিয়ে দিতে পারলে বাধ্য হয়ে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু বাগমারার হামিরকুৎসা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের বাগিচাপাড়া এলাকার একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন। ফলে এলাকার লোকজন তাকে ‘বাচ্চু হুজুর’ বলে সম্বোধন করতেন। ইমামতির পাশাপাশি কবিরাজিও করতেন তিনি। তাই ঝাড়ফুঁক দিতে তাকে যেতে হতো এলাকার বিভিন্নজনের বাড়িতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাচ্চু সাংসারিক জীবনে করেছেন তিন বিয়ে। সন্তান রয়েছে সাতটি। তার নিজের গ্রামে প্রথম স্ত্রী থাকলেও নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার রামসার কাজীপুরে দ্বিতীয় বিয়ে এবং চট্টগ্রামে তৃতীয় বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর কোলে আসে তিন সন্তান, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তৃতীয় স্ত্রী এখনো পর্যন্ত কেনো সন্তানের মুখ দেখেন নি। যদিও তৃতীয় বিয়ে হয় অনেকটা অনাকাংখিতভাবে। চট্টগ্রামে যান
ধর্মীয় কাজে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে তৃতীয় বিয়ে করতে বাধ্য হন।
স্থানীয়রা জানান, বাচ্চুর তিন স্ত্রী থাকলেও মহামারী করোনায় জারিকৃত লকডাউনের মধ্যেই পালিয়েছেন আরেকজনের স্ত্রীকে নিয়ে।
ওই নারীর স্বামী প্যারালাইসিসের রোগী হওয়ায় ঝাড়ফুঁক দিতে তার বাড়িতে যাতায়াত ছিল বাচ্চুর। সেখান থেকেই গড়ে ওঠে তাদের সম্পর্ক। তবে গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে নারীর ছেলে বাচ্চুকে তাদের বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন। তবুও বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘোরি করতেন তিনি। গত ১১ এপ্রিল ওই নারী তার বাবার বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হন। এরপর আর ফেরেন নি, বাবার বাড়িও যান নি। বাচ্চুও তখন থেকেই লাপাত্তা।
ওই নারীর ছেলে নাম গোপন রাখার অনুরোধে বলেন, অনেক খোঁজার পর মায়ের কোনো সন্ধান না পেয়ে গত ১১ এপ্রিল বাগমারা থানায় একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করি। থানার ওসি মোস্তাক আহম্মদের সঙ্গে দেখা করেও বিষয়টি জানাই। সেসময় ওসি বলেন, ‘তারা দুজনেই যেহেতু ম্যাচিউরড। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই ভাল। প্রয়োজনে আপনি আদালতে মামলা করতে পারেন’।
ওই নারীর ছেলে আরো বলেন, ওসির কথা শুনে বাসায় চলে আসি। তবে ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও থানায় দায়েরকৃত অভিযোগের কোনো অগ্রগতি হয় নি। এখনো সন্ধান পাই নি মায়ের। কেউ আমার মায়ের সন্ধান এবং বাচ্চুকে ধরিয়ে দিতে পারলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।
এ বিষয়ে বাগিচাপাড়া মসজিদের সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন জানান, ইমাম থাকাকালেও আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু নারীদের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত ছিলেন। পরকীয়ার ঘটনা জানাজানি হলে তাকে ইমামতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে বাচ্চুর বিষয়ে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হন নি।
এ ব্যাপারে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আগামীনিউজ/নাহিদ