দিনাজপুরঃ টানা লক ডাউনে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন যাত্রায় স্থবিরতা নেমে এসেছে। দেশের সর্বউত্তরের বৃহৎ রেলওয়ে জংশন রয়েছে পার্বতীপুরে। প্রতিদিন ৫২টি যাত্রীবাহি ট্রেন পার্বতীপুর হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। হাজার হাজার যাত্রী উঠানামা করে এসব ট্রেনে। আর এসব যাত্রীদের আনাগোনাকে ঘিরেই পার্বতীপুরের মানুষের জীবন জীবিকা প্রবাহমান। কিন্তু মহামারী কোভিড-১৯ সবকিছুই লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। মানুষের জীবন বাঁচাতে সরকার লকডাউন ঘোষনা করায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনকে ঘিরে যেসব মানুষের জীবিকা তা আজ কালের মহামারীর ছোবলে পুরোপুরি স্থবির হয়ে গেছে। রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের ছোটছোট ব্যবসায়ীরা ক্রেতার অভাবে দোকানপাট বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।
পার্বতীপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের বসবাস। এদের অনেকেই মধ্যপাড়া কঠিন শিলা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমান সময়ে এসব কাজের উৎস বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমজীবি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার ভ্যান চালক। গত বছরের করোনার সময় শ্রমজীবি কর্মহীন মানুষদের পাশে রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও দানশীল মানুষরা পাশে দাড়িয়েছিল। এবারে কাউকে সহযোগিতা নিয়ে কোন অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে দেখা যাচ্ছে না। সরকারিভাবেও কোন ত্রাণ তৎপরতা নেই। উল্লেখিত এসব কথা বলেন বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পার্বতীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, ইয়াং স্টার ক্লাবের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন।
তিনি আগামী নিউজকে আরও বলেন, দারিদ্র পীড়িত এই উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ শ্রম বিক্রি করে তাদের পরিবারের সদস্যদের পেটে অন্ন জোগান দেন। সে শ্রম বিক্রির জায়গা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আয় করার বিকল্প পথ খোলা থাকে না তাদের সামনে। ট্রেন চলাচল অব্যাহত থাকলে অনেকেই ট্রেনে, স্টেশনের প্লাটফরমে হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় শতশত হকার বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। ট্রেনের যাত্রীরা ইজিবাইক, অটো ভ্যানে করে গন্তব্যে যাতায়াত করতো। এতে করে কয়েক হাজার চালকের পরিবারের সদস্যের পেট চলতো। সেসব এখন পুরোপুরি বন্ধ। এমন অবস্থায় শ্রমজীবি মানুষ দিকশুন্য হয়ে পড়েছে।
আমজাদ হোসেন আগামী নিউজকে আরও বলেন, তিনি অনেক কষ্টে নিজ তহবিল থেকে রাতের বেলা স্টেশনের প্লাটফরমে থাকা ভাসমান মানুষদের একবেলা খাবারের জোগান দিচ্ছেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় তারও দানের ভান্ডার ফুরিয়ে আসবে। এর ফলে তাকেও পিছু হটতে হবে বলে তিনি জানান।
সংস্কৃতিকমনা এই মানুষটি আগামী নিউজকে আরও বলেন তারপরও শত প্রতিকূল অবস্থায় থেকে সাধারণের মুখে যৎসামান্য খাবার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা তার অব্যাহত থাকবে। মানুষের এমন দুর্দিনে রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও ধনবান মানুষদের তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান।
আগামীনিউজ/নাহিদ