কক্সবাজারঃ বিমান বন্দরের উপ-সহকারীর প্রকৌশলী (সিভিল) সোহেল রানা দুর্ণীতির শেষ নেই। বিমান বন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজে অধিগ্রহণ এলাকার পুরনো রাস্তা,মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনার ২০ লাখ টাকার মালামাল বিনা টেন্ডারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
ব্যক্তিগত সম্পদের মতো মালামালগুলো বিক্রি করে বিশাল অংকের টাকা পকেটস্থ করেছেন এই উপ-সহকারীর প্রকৌশলী। আর দেখেও নীরব ভুমিকায় ছিলেন এ প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) শফিকুল ইসলাম।
এনিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে,কক্সবাজার বিমান বন্দরে রাত্রিকালিম ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার শহরের পুরনো ঝিনুক মার্কেটস্থ জেলে পার্ক, ১৭ ইসিবি এলাকা, বালিকা মাদ্রাসার পিছনে সৈকতপাড়া অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে ওই এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয় সরকার।
তবে কোন ধরনে দরপত্র আহবান না করে জেলেপার্কের পাশে ১৭ ইসিবি স্থাপনা, বালিকা মাদ্রাসার পিছনে সৈকত পাড়া, চলাচলের পাকা রাস্তা, বিভিন্ন স্থাপনা ও উচ্ছেদ এলাকার মসজিদের পুরাতন নির্মাণ সামগ্রী ইট, কংক্রিট, লৌহার রডসহ আরও বিভিন্ন প্রায় ২০ লাখ টাকা পুরনো মালামাল ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বিমান বন্দরের উপ-সহকারীর প্রকৌশলী সোহেল রানা। আর এসব স্থাপনার পুরনো মালামাল মিনি ট্রাকের মাধ্যমে প্রকাশ্যে পাচার করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যক্তি জানান,কিছুদিন পূর্বে জনৈক ঠিকাদারকে পুরাতন মালামালগুলো দেওয়ার জন্য অগ্রীম দেড় লাখ টাকা নিয়েছিলেন কক্সবাজার বিমান বন্দরের উপ-সহকারীর প্রকৌশলী (সিভিল) সোহেল রানা। কিন্ত আরো বেশি অর্থ পাওয়ায় কাজটি প্রথম জনকে না দিয়ে অন্য একজন ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেদেন। অবশ্য পরে টাকাগুলো প্রথমজন (ঠিকাদার) কে ফেরত দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা আরও জানান, অধিগ্রহণকৃত এলাকার পুরনো রাস্তার ইট তুলে বিক্রি করে দিয়ে ফের সেখানে বালি দিয়ে ডেকে রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলাম সার্বক্ষণিক ওই এলাকা পরিদর্শনে ছিলেন। তার চোখের সামনে সবকিছু পাচার হয়েছে। কিন্তু বিনা টেন্ডারে বিক্রি করা পাকা মসজিদ, ঘরবাড়ি, পাকা রাস্তার ইট, লৌহার রড ট্রাকে ভরে নিয়ে গেলেও তিনি রহস্যজবক কারণে নিরব ছিলেন।
দরপত্র আহবান করে এসব পুরাতন মালামাল নিলামে বিক্রি করা হলে, বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ ২০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করতেন।কিন্ত সরকারের প্রাপ্ত এ অর্থ একাই পকেটস্থ করেছেন উপ-সহকারীর প্রকৌশলী সোহেল রানা। বিনা দরপত্রে প্রায় ২০ লাখ টাকা পুরনো মালামাল বিক্রি বিষয় জানতে প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিমান বন্দর ব্যবস্থাপকের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
এব্যাপারে কক্সবাজার বিমান বন্দর ব্যবস্থাপক আল আমিন ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে, এবিষয়ে তিনিও কিছু জানেন না বলে জানান।
এব্যাপারে কক্সবাজার বিমান বন্দরের উপ-সহকারীর প্রকৌশলী (সিভিল) সোহেল রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব মালামাল কে বিক্রি করেছে, কারা নিয়ে গেছে এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না। পুরাতন মালামাল বিক্রি তিনি করেননি বলে জানান। এবিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত এলাকার পুরনো স্থাপনার মালামাল দরপত্র আহবান না করে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো বিক্রি করে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রচেষ্টা কোনোভাবেই বরদাশত করা ঠিক হবে না। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সরকারী সম্পদ বিক্রি করে বিশাল অর্থ পকেটস্থ করার অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই যথাযথ আইনের আওতায় আনা হোক।
আগামীনিউজ/এএস