কুষ্টিয়াঃ জেলার দৌলতপুরে নতুন করে পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের প্রায় ৪ কি. মি. এলাকাজুড়ে পদ্মার ভাঙ্গনে কয়েক হাজার একর আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন খুটি, সরকারী বিভিন্ন স্থাপনা, বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ ৩টি ওয়ার্ডের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। ভাঙ্গনরোধে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বন্যা মৌসুমে তৃতীয় বার পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়া, ভুরকাপাড়া ও কোলদিয়াড় এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে অনেকের বসতবাড়ি ও কয়েক হাজার একর আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন খুটি, সরকারী বিভিন্ন স্থাপনা, ভুরকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নদীভরাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় কান্দিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদ, জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জুনিয়াদহ বাজারসহ অসংখ্য ঘর-বাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্থরা জানিয়েছেন, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি পদ্মাগর্ভে চলে যাওয়ায় তারা এখন সর্বশান্ত ও আশ্রয়হীন। পদ্মার ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।
পদ্মার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ ৯নং ওয়ার্ডের হাটখোলাপাড়া এলাকার এলাকার হাসানুজ্জামান রাজা জানান, নতুন করে গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রায় ৪ কি. মি. এলাকা জুড়ে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পদ্মার ভাঙ্গনে তার আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে অচিরেই তাদের ঘর-বাড়ি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন জাহিদ হোসেন, খলিলুর রহমান, আব্দুল মজিদ ও রাকিব আলীসহ অনেকে। তাদের প্রত্যেকের জমির ফসলসহ আবাদী জমি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে রাত-দিন কাটছে তাদের।
মরিচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর জানান, পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদী ভঙ্গনে তার ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়া, ভুরকাপাড়া ও কোলদিয়াড় ৩টি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার বিঘা আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি হারিয়েছে অসংখ্য পরিবার। আতঙ্কে রয়েছে ৩টি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ। হুমকির মুখে রয়েছে রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন খুটি, সরকারী স্থাপনা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে দৌলতপুরের মানচিত্র থেকে মরিচা ইউনিয়ন নিশ্চিহ্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভাঙ্গনরোধে সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনে দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি শাহ আলমগীর।
পদ্মার ভাঙ্গন রোধের বিষয়ে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. আ. ক. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা জানান, পদ্মা নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানে জিও ব্যাগ ফেলে তা রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও ওইসব এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙ্গন রোধে ব্লক বসিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চলছে।
তবে এলাকাবাসীর দাবি সর্বগ্রাসী পদ্মার করাল গ্রাস থেকে বাঁচাতে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
আগামীনিউজ/আশা