সিরাজগঞ্জঃ জেলার তাড়াশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারীরা পুরুষের সাথে সমান তালে শ্রম বিক্রি করে উপার্জন করছেন। হাল ধরছেন সংসারের। এতে সংসারে আসছে অনেকটা সচ্ছলতা। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে নতুন করে পথ চলা শুরু করেছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পবিবারের সদস্যরা।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি জরিপ থেকে জানা গেছে, তাড়াশ উপজেলায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ১৮ হাজার ৯৯২ জন মানুষের বসবাস। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ২৫৬ ও নারী ৮ হাজার ৭৩৬ জন। এখানে উরাঁও, মাহাতো, সাঁওতাল, বসাক, মুরারী, তুরী, সিং, রবীদাস, রায়, মাহালি সহ মোট ১৪টি আদিবাসীর গোত্র রয়েছে। জেলায় আদিবাসী গ্রামের সংখ্যা ১০৩টি। আর এতে বসবাস করে প্রায় ৭ হাজারের বেশি পরিবার।
এ অঞ্চলে কখন আদিবাসীদের বসবাস শুরু হয় তার কোন সঠিক ইতিহাস জানা নেই কারো। তবে ধারণা করা হয়, ১৮৮৬ সালে তাড়াশ-রায়গঞ্জ অঞ্চলে জমিদাররা তাদের অনাবাদী বন-জঙ্গল ঘেরা ভূমিতে শস্য উৎপাদনের জন্য অন্য অঞ্চল থেকে এই জনগোষ্ঠী নিয়ে আসেন। পরে জমিজমা তাদেরকে লীজ প্রদান করেন। সে থেকেই এ অঞ্চলে আদিবাসী ও নৃগোষ্ঠীর বসবাস।
আগে থেকেই এই জনগোষ্ঠীর লোকজন নানা অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করে আসছে। সংসারে অভাব থাকার কারণে অল্প দামে তারা অগ্রীম শ্রম বিক্রি করতেও বাধ্য হয়েছে। যখন শ্রমিকের মুজুরী বেশি তখন তারা অগ্রীম শ্রম বিক্রি করার জন্য এই মূল্য পেত না। অগ্রীম মূল্যতেই তাদের কাজ করে দিতে হতো। কিন্তু এখন অনেকটাই ঘুড়ে দাড়িয়েছে তারা। এখন আর অগ্রীম শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন না কেউই।
আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারীরা জানান, শুধু পুরুষদের শ্রমের টাকায় সংসার খরচ ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলে না। তাই তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া থেকে পিছিয়ে যায়। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য, সংসারের খরচ চালানোর জন্য পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও শ্রম বিক্রি করছেন। নিজেদের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে। সংসারের স্বচ্ছলতা আনার জন্য নারীদের অংশগ্রণই এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
এ বিষয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা একেএম মনিরুজ্জামান বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা প্রসংশনীয়। তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য আমরা উপবৃত্তি দিয়ে সহযোগীতা করছি। তাদের অসচ্ছল পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে সুদমুক্ত ঋণ। এ সহযোগীতা চলমান থাকবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুর নাহার লুনা বলেন, কৃষিতে পুরুষের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন । তারা কৃষিতে ধান রোপন, নিড়ানো, কাটা, সকল কাজে অংশগ্রহণ করেন। ধান কাটার মৌসুমে যখন শ্রমিকের সংকট হয় তখন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা এই শ্রমিকের ঘাটতি পূরণে ব্যাপক সহায়তা করেন।
আগামীনিউজ/এএইচ