উত্তরের সীমান্তবর্তী একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলায় রয়েছে অনেক পুরোনো গ্রামবংলার বেশ কিছু ইতিহাস ও ঐতিহ্য তার মধ্যে মাটির ঘর অন্যতম। আজ আধুনিক বিভিন্ন নান্দনিক কারুকার্য ও শিল্প-কলা কৌশলে নির্মিত ইটের ও টিনের তৈরি পাকা ঘর বাড়ির ব্যপক বিস্তারে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী গ্রামীন জনপদের সেই মাটির ঘর।
লোক মুখে জানা গেছে , অতীতে মানুষ বাঁশ, বেত, খড়, ছন, ইকর, চালা দিয়ে, কাঠ ও মাটি দিয়ে দেয়াল বানিয়ে স্বহস্তে ও কারিগর দিয়ে সুন্দর করে ঘর তৈরি করতেন। মাাটির ঘর বাড়ির সঙ্গে মিশে আছে গ্রাম বাংলার মানুষের নিবিড় বেশ কিছু সম্পর্ক। গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে টিনের চালা দিয়ে কিছু মাটির তৈরি ঘর দেখা গেলেও বাঁশ ও খড়ের চালার সেই মাটির ঘর আজ একবারে বিলুপ্তির পথে।
ঠাকুরগাঁয়ে সদর উপজেলাসহ ও জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিনিয়ত মাটির তৈরি ঘর বাড়ির স্থলে জায়গা করে নিচ্ছে আধুনিক কলা কৌশলে নির্মিত বিলাশবহুল পাকাবাড়ি ও দালান। আধুনিক যুগের আধুনিকায় সময়ের আবর্তনে মানুষের মানুষিকতা ও ভাব ধারার পরিবর্তন ঘটছে। ধনীদের সাথে তাল মিলিয়ে এই অঞ্চলের দিনমজুররাও এখন মাটির ঘর ভেঙ্গে তৈরি করছেন দালান ঘর। এ অঞ্চলের মানুষগুলোর মধ্যে চলছে পাকা ঘর নির্মানের এক কৃত্তিম প্রতিযোগীতা। অনেক সচেতন মানুষ মনে করেন আগামী দশ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলের মাটির ঘরের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ ত্রিশ বছর পর্যন্ত সীমান্তবর্তী এ জেলায় মাটির ঘরের কোন বিকল্প ছিল না। শীত ও গরমে মাটির ঘরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করত এলাকার মানুষ। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন গ্রামে বসবাসরত নিম্ন আয়ের মানুষ মাটির তৈরী ঘরে বসবাস করছে।
সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের নবীর উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ বলেন ১৮৩৯ সালে ব্রিটিশদের মাধ্যমে তৎকালিন ভারতবর্ষ (বর্তমান বাংলাদেশ) দেশের চা বাগান গুলোতে মাটির তৈরি হওয়ার কথা শুনছি। এর পর থেকে এ এলাকার গ্রামীণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তার মতে মাটির বাড়ি তৈরি খরচ কম। ঘরে জানালার মাধ্যমে আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা যায়। ঘরে ঠান্ডার সময় ঠান্ডা তেমন প্রবেশ করতে পারে না। তেমনি গরমের সময় তেমন গরম অনুভূত হয় না। এতে মানুষ মানবদেহের বিভিন্ন কঠিন রোগ থেকে বাঁচতে পারে।
আগামীনিউজ/এএস