Dr. Neem on Daraz
Victory Day

নবগঙ্গা-চিত্রা-ইছামতি ও কপোতাক্ষের মানচিত্র বদলে দিচ্ছে নদী খেঁকোরা


আগামী নিউজ | ঝিনাইদহ প্রতিনিধি  প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২০, ১১:২৬ এএম
নবগঙ্গা-চিত্রা-ইছামতি ও কপোতাক্ষের মানচিত্র বদলে দিচ্ছে নদী খেঁকোরা

নবগঙ্গা-চিত্রা-ইছামতি ও কপোতাক্ষর মানচিত্র বদলে দিচ্ছে নদী খেঁকোরা। এখন আর যৌবন নেই এসব নদ বা নদীর।  ভূমিদস্যুদের থাবায় এবং খননের অভাবে নদীগুলো পরিণত হয়েছে মরা খালে। কোথাও ধানচাষ হচ্ছে আবার কোন কোন নদীর বুকে গড়ে ওঠেছে বিলাসবহুল বাড়ি।  ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ১২টি ছোট-বড় নদ-নদীর চিত্র এমনটাই ঘুরে দেখা গেছে।  

আগামী নিউজ ডটকমের স্থানীয় প্রতিনিধি সরেজমিনে ঘুরে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।  

এই জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে-ঝিনাইদহের উপর দিয়ে বয়ে গেছে নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, বেগবতি, গড়াই, ইছামতি, ডাকুয়া, কালীগঙ্গা, কোদলা, ফটকী, বুড়ি নদী ও কপোতাক্ষ নদ। যার মোট আয়তন ১ হাজার ৬শ’ ৪১ দশমিক ৭৫ হেক্টর। ঝিনাইদহ শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদী।

জেলার মহেশপুর উপজেলা ও উপর দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব, কপোতাক্ষ, কোদলা, ইছামতি ও বেতনাসহ পাঁচটি নদ-নদী। কুষ্টিয়ার গড়াই থেকে ভৈরব ও মাথাভাঙ্গা নদী চুয়াডাঙ্গা হয়ে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে প্রবেশ করেছে কপোতাক্ষ নদ। এ নদটি জীবননগর থানার বকুন্ডিয়া, মারুফদা কোল ঘেষে মহেশপুর উপজেলার পুরন্দপুর, খালিশপুর, সাড়াতলা, কদমতলা, ফতেপুর, বেগমপুর, বৈচিতলা, মহেশপুর, ভালাইপুর, সুন্দরপুর, কোটচাঁদপুর হয়ে যশোর জেলার চৌগাছা, ঝিকরগাছা, কেশবপুর, সাগরদাড়ী চলে গেছে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান সাগরদাড়ী কবি নদের কথা স্বরণ করেন ফ্রান্সের ভার্সই নগরে বসে বিখ্যাত কপোতাক্ষ নদ কবিতাটি লেখেন।

কবির লেখা কবিতার এ কপোতাক্ষ নদটি যুগ যুগ ধরে আমাদের নানাভাবে উপকার করে। সেই নদটির খালিশপুর বাজার ও মহেশপুর পৌরসভার অংশের দুই ধারে ভূমি দস্যুদের দ্বারা দখল হয়ে গেছে। ফলে এক সময়ের প্রবাহমান নদটি আজ মরতে বসেছে।

নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে নদীর জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এই শহরের সমস্ত ড্রেনের ময়লা আবর্জনা গিয়ে পড়ছে এই নদীতে। যে কারণে নদীর পানি পচে দুর্গন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারণে একদিকে যেমন কমছে নদীর প্রশস্ততা, সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণী ও সেই সঙ্গে পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে।

তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি এই শহরে বসবাসরত লাখ লাখ সাধারণ মানুষের। ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর এলাকার রাশেদ মালিতা বলেন, ছোটকালে দেখেছি নবগঙ্গা নদীতে বড় বড় পাল তোলা নৌকা আসতো।

এই নৌকা ধোপাঘাটা ব্রিজ এলাকায় নোঙর ফেলে ব্যবসায়ীরা ঝিনাইদহ শহরে ব্যবসা করতে আসতো। কিন্তু আজ সেই নদীতে এখন ডিঙি নৌকাও চলে না। বর্ষা মৌসুমে একটু পানি থাকলেও শীত মৌসুমে পানি শুকিয়ে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তখন নদীর এপাড় ওপাড়ের মানুষ হেঁটে হেঁটেই নদী পার হয়ে যায়।

বছরের পর বছর দখল বেদখল হয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই। বাঁশবাড়িয়া ও কাজীরবেড়র ইউনিয়নের কোদলা নদীটি বিভিন্ন লোকজন দখল করে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে। যাদবপুর ও নাটিমা ইউনিয়নে বেতনা নদী প্রায় সবটুকু দখল হয়ে গেছে। স্বরুপপুর, শ্যামকুড় ও নেপা ইউনিয়নের ইছামতি নদী দখল বেদখলে এখন মরা খাল। সরকার জেলা উপজেলায় নদ-নদী দখলদারকে উচ্ছেদের নির্দেশ দিলেও মহেশপুরে উপজেলা এখনও এটি কার্যকর হয়নি।

বর্তমানে মহেশপুরে নদী দখল করে চলছে কৃষি আবাদ, পুকুর খনন, ঘর-বড়ী নির্মাণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এ সকল দখলদাররা যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন তাদের ছত্রছায়ায় থাকে। এক শ্রেনীর রাজনৈতিক নেতারা পৃষ্টপোষক হিসেবে কাজ করে। স্থানীয় সচেতন মহল দাবি জানিয়েছে যেহেতু সরকার অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আন্তরিক ও হাই কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে সে ক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে দ্রুত নদী কমিশনের আইন অনুযায়ী জরিপ চালিয়ে নদীর জায়গা উদ্ধার এবং খনন করে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে।

মহেশপুর উপজেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ও মহেশপুর সরকারী পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এটিএম খাইরুল আনাম আগামী নিউজকে জানান, একসময় এ উপজেলা উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীতে পাল তোলা নৌকা চলতো। সে সময় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল পানি পথ। এ ছাড়া নদীর দুকূলে বসবাসকারীরা নদীর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন সে সব নদ-নদী দখল-বেদখলে মৃত্যু প্রায়। অনেক নদ-নদী ভরাট হয়ে গেছে। সম্প্রতি খাল নদ-নদী খনন কার্যক্রম কর্মসূচি গ্রহন করা আওয়ামী লীগ সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রাক্তন এই প্রধান শিক্ষক।

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুজন সরকার আগামীনিউজকে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এ বছরেই নদী জরিপ করে পুনঃখননের কাজ করা হবে বলে যোগ করেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ আগামীনিউজকে বলেন, নবগঙ্গা নদীর উৎসমুখ চুয়াডাঙ্গাতে বন্ধ হয়ে আছে। চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙা নদী থেকে আসা এ নদীটির মুখ বহুবছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলাকে অনুরোধ করা হয়েছে উৎসমুখ খনন করার জন্য।

সেখানকার জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন উৎসমুখ খনন করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। সেখানে খনন করা হলেই চিত্রা, বেগবতি আর নবগঙ্গা নদী কিছুটা হলেও পানির স্রোত ফিরে পাবে। এ ছাড়া যেসব স্থানে অবৈধ দখলদার রয়েছে সেখানেও দ্রুতই অভিযান চালিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে বলে জানান তিনি।  

আগামীনিউজ/ডলি/মিজান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে