ফরিদপুরঃ (মধুখালী—বোয়ালমারী—আলফাডাঙ্গা) ফরিদপুর—১ আসনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে নেতাকর্মীরা।
এর মধ্যে দলের প্রবীণ পরীক্ষিত নেতাদের পাশাপাশি জনবিচ্ছিন্ন নেতাকর্মী ও সাবেক ছাত্রনেতারাও রয়েছেন। মাত্র ৫ মাস সময়কালের এ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেতে রীতিমত হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। পোস্টার—ব্যানারের মাধ্যমে অনেকে আবার নিজের পরিচয় তুলে ধরার পাশাপাশি প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিও জানান দিয়েছেন। ফরিদপুরের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর—১ আসনে নৌকার পক্ষে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসনে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পরে সেদিকে খেয়াল রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দল, কর্মী ও নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছেন।
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সাংসদ মো. আবদুর রহমান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সাংসদ কাজী সিরাজুল ইসলাম, এই আসনের বর্তমান এমপি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. মনজুর হোসেন, বোয়ালমারী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট লিয়াকত শিকদার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তিতাস গ্যাসের সাবেক পরিচালক খান মঈনুল ইসলাম মোস্তাক, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ রায়, কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক লায়ন মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ—সভাপতি সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ মাষ্টারের ছেলে বর্তমান আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব খিজির আহমেদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিন্টু, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও বর্তমান এমপির স্ত্রী সেলিনা আক্তার, ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন এবং আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ শামীম রেজা ও প্রফেসর ডাঃ মোঃ গোলাম কবীর, অধ্যক্ষ মাওলানা হাবিবুর রহমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ বখতিয়ার রহমান বতুর নাম শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে রাস্তা, বাজার, গ্রামের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
এদিকে বিএনপিতে রয়েছে ভাঙ্গনের সুর। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৪ জন। তারা হলেন— বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আবু জাফর, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ সভাপতি ও সাবেক সাংসদ খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজিজুল আকিল ডেভিড সিকদার এবং ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদ নিউটন মিয়া। এর মধ্যে সাবেক সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আবু জাফর ও সাবেক সাংসদ খন্দকার নাসিরুল ইসলামের মধ্যে দলীয় কোন্দলে যে যার মত করে নেতাকর্মীদের নিয়ে দল গোছাতে ব্যস্ত।
জাতীয় পার্টিরও রয়েছে একাধিক প্রার্থী । মধুখালী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলী আহমেদ মৃধা, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গ্রীন চাষী মোঃ কামরুজ্জামান মৃদ্ধা ও জাতীয় পার্টির নেতা মোঃ আক্তারুজ্জামান।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর—১ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মনজুর হোসেন। এর আগে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে এক লাখের বেশি ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুর রহমান। তিনি ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকায় বেশ উন্নয়নমূলক কাজ করেন।
জাতীয় পার্টির মধুখালী উপজেলা শাখার সভাপতি আলী আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন তৃণমূলে জনগনের সাথে মিশে আছি। দলীয় মনোনয়ের ব্যপারে আমি আশাবাদী। এবং আগামী নির্বাচনে ফরিদপুর—১ আসনে জাতীয় পার্টির বিজয় হবে।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মোঃ আবু জাফর বলেন, আগামী নির্বাচন যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে হয় তাহলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। যদি নির্দলীয় সরকারের অধিনে হয় সেক্ষেত্রে নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। মনোনয়নের ব্যপারে তিনি বলেন দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার হয়ে মাঠে কাজ করতে হবে।
দলের মনোনয়ন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, ফরিদপুর—১ আসনের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামীলীগ প্রাচীন ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল। নেতৃী দলের পরীক্ষীত ত্যাগী নেতাদেরকেই বিবেচনা করে মনোনয়ন দিবেন। তবে দলীয় মনোনয়নই বড় কথা নয়, দেশের মানুষের পাশে থাকা, মানুষের সেবা করা ও বঙ্গবন্ধুর সপ্নের বাংলাদেশ গড়তে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন যেই পাবে তাকে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে দেশের উন্নয়ন অব্যহত রাখতে হবে।
সালেহীন সোয়াদ সাম্মী/এমআইসি