Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ঈদের টানা ছুটিতে ভারতে যাওয়ার ভিড়ে সরগরম বেনাপোল চেকপোস্ট


আগামী নিউজ | উপজেলা প্রতিনিধি, বেনাপোল (যশোর) প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩, ০১:৩২ পিএম
ঈদের টানা ছুটিতে ভারতে যাওয়ার ভিড়ে সরগরম বেনাপোল চেকপোস্ট

যশোরঃ ঈদের টানা ৫ দিনের লম্বা ছুটি কাটাতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের বেনাপোল চেকপোস্টে উপচে পড়া ভিড়। ছুটিতে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার বেড়েছে কয়েকগুণ। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, চিকিৎসা, ব্যবসা, কেনাকাটা ও বেড়ানোর উদ্দেশে ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত অন্য সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ভিসা সহজলভ্যতা ও খরচ কম পড়ায় বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

গত ১০ দিন থেকে বেনাপোল চেকপোস্টে ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এই ১০ দিনে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ৬৩ হাজার ৭৩৯ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে প্রবেশের আগে পুলিশের সহযোগিতায় লাইনে দাঁড়িয়ে সারিবদ্ধভাবে ভ্রমণকর কাটছেন। এরপর কাস্টমসের স্ক্যানিং কাজ শেষ করে পাসপোর্টযাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে তাদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করছেন। সার্বিক নিরাপত্তা ও কোনো রকম বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় তার জন্য লাইনের মাঝে মাঝে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা নজরদারিতে রয়েছে। তবে দালালের তৎপরতা কমেনি। তারা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের আগে কাজ করিয়ে দেয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সহজসরল যাত্রীদের কাছ থেকে।

সোমবার সকালে চেকপোস্টে যেয়ে দেখা যায়, বেনাপোল চেকপোস্টের আন্তর্জাতিক টার্মিনালের সামনে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সারতে পুলিশ, আনসার ও বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেনাপোল চেকপোস্টে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাসপোর্টের কাজ সম্পন্ন করে ভারতীয় চেকপোস্টে প্রবেশের সাথে সাথে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ওপারের ইমিগ্রেশনের কাজ ধীরগতির কারণে যাত্রীদের এ দীর্ঘলাইন এমন অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

ভারতীয় ইমিগ্রেশন থেকে ভারতীয় কাস্টমস, মেইন গেট, নোম্যান্সল্যান্ডে কয়েকটি গোলাকার লাইন পেরিয়ে আশেপাশের মাঠ ছাপিয়ে গেছে লাইন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, মা ও শিশুদের কষ্টের সীমা নেই। অনেক রোগীদের রাস্তার উপরেই বসে থাকতে দেখা গেছে। প্রচণ্ড রোদে ও খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার নারী শিশু ও পুরুষ।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল। বেনাপোল থেকে কলকাতার দুরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। অল্প সময়ে কম খরচে বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাওয়া যায় কলকাতা হয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। এ কারণে মানুষ এ পথে বেশি যাতায়াত করে থাকে। গত ১৬ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৭৩৯ জন যাত্রী ভারতে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ২২ হাজার ৬৭৩ জন এবং ভারত থেকে এসেছেন ৩০ হাজার ৬৬ জন। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের ধারণা ঈদের দিন পর্যন্ত যাতায়াত বেড়ে দাঁড়াবে এক লাখের কাছাকাছি।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতগামী ঢাকার শ্যামলীর আল নাহিয়ান বলেন, এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারত যাচ্ছি ঈদ করতে। তিনি বলেন, দেশেতো সবসময় ঈদ করা হয়। মেয়ে নাতি জামাইকে নিয়ে এবার দেশের বাইরে ঈদ করাসহ দর্শনীয় জায়গা ভ্রমণ করার জন্য ভারত যাচ্ছি।

ঢাকা থেকে আসা সুপিয়া খাতুন ও তার স্বামী জালাল উদ্দিন বলেন, ঈদের আনন্দটা একটু অন্য রকম। এবার ঈদে একটু আগে থেকে ছুটি পাওয়ায় ভারতে যাচ্ছি ঈদ করতে। সেখানে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ঈদ করব। এছাড়া একাধিক যাত্রী তাদের মতামত ব্যক্ত করে বলেন, আমরা এ বছর ঈদের লম্বা ছুটি পাওয়ায় ভারতের বিভিন্ন দর্শনার্থী স্থানও দেখব আবার ঈদের আনন্দও উপভোগ করব।

গোপালগজ্ঞের মনোরজ্ঞন সাহা তার বন্ধুদের সঙ্গে ভারতে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন ভবনে বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি, তাই ঘুরে বেড়ানোর সময় পাইনা। এবার ঈদের লম্বা ছুটি পাওয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে ভারতে বেড়াতে যাচ্ছি। ভারতে কয়েকজন আত্মীয় রয়েছে এ সুযোগে তাদের সঙ্গে দেখা করাও হবে বেড়ানোও হবে।

গাজিপুরের সদরের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আজাদ। শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ভারতে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাবেন। কাজের ব্যস্ততার কারণে এতোদিন সময় করে উঠেতে পারেনি। লম্বা ছুটিতে ব্যস্ততা কম থাকায় এবার এ সুযোগে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। চিকিৎসা শেষে ভারতের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরবেন বলে ঠিক করেছেন। ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকায় পাসপোর্টের কার্যাদি সম্পন্ন করতে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে বলে তিনি জানান। 

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবীব বলেন, ঈদের ছুটিতে যাত্রী সংখ্যা বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকাল থেকে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। শুক্র, শনি, রবি ও সোমবার যাত্রীর চাপ অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রীদের সেবায় ইমিগ্রেশনে আমাদের লোকজন একটানা কাজ করে যাচ্ছে। কোনও ত্রুটি বিচ্যুতি হবে না আশা রাখি। পাসপোর্টযাত্রীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তার জন্য ইমিগ্রেশনে নজরদারি করা হচ্ছে। সেই সাথে যাত্রী সেবা বাড়াতে ইমিগ্রেশন চত্বরে পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। 

মোঃ মনির হোসেন/বুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে