Dr. Neem on Daraz
Victory Day

রাজবাড়ীতে সূর্যমুখী চাষে ‘ঝুঁকছেন’ কৃষক


আগামী নিউজ | জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৩, ০২:০১ পিএম
রাজবাড়ীতে সূর্যমুখী চাষে ‘ঝুঁকছেন’ কৃষক

ঢাকাঃ দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার।

দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগান নানান বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের এ বাগানটি এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আসছেন, কেউ বা আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। সুখস্মৃতি ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিতে মুঠোফোন কিংবা ক্যামেরায় ছবি তুলছেন তারা।

মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্যটির দেখা মেলে রাজবাড়ীর ৫ উপজেলায়।

চাষাবাদ সহজ ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন। এতে ভোজ্যতেল সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। সূর্যমূখী থেকে শুধু তেল নয় পাওয়া যায় পাখি, মাছ, জৈব সার ও গবাদী পশুর খাদ্য। বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষ বাড়াতে নেওয়া হচ্ছে নানাবিধ উদ্যোগ। চাষিদের আশা, এ বছর জেলার ১শ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করে ২ কোটি টাকা বীজ বিক্রি করবেন তারা। 

চলতি মৌসুমে জেলার ৫ উপজেলায় ১শ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখী চাষ করেছেন চাষিরা। প্রতি হেক্টরে ২ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদিত হবে। যা স্থানীয় বাজারে ৪ হাজার টাকা প্রতি মণ বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবে কৃষক।

সূর্যমুখীর আবাদ বাড়াতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া ভালো থাকায় চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা তাদের।

জেলা সদরের সুলতানপুর ইউনিয়নের ধর্মশী গ্রামের সূর্যমুখী চাষী পিংকু কুমার দাস বলেন, এ বছর আমি ২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছি। সূর্যমুখীর ফলন ভালো হয়েছে। ৩৩ শতাংশে ৬ মণের বেশি ফলন হয়। বাজারে প্রতি মণ সূর্যমুখীর বীজ ৪ হাজার টাকা। অনেক ক্রেতা সূর্যমুখীর বীজ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ বছর ভালো ফলন ও দাম পেলে আগামী বছরে এর আবাদ বাড়াবো।
আরেক চাষি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি চলতি মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের সূর্যমুখীর চাষ করেছি। আল্লাহর রহমতে ফলন ভালো হয়েছে। আমি আশা করছি এ বছর ভালো ফলনে ভালো মানের বীজ পাবো। বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবো। 

আরেক চাষি মো. সেলিম মোল্লা বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। প্রতিদিন বিকেল বেলায় আমার জমিতে ফোটা সূর্যমুখী ফুল দেখার জন্য দূর-দূরান্ত হতে অনেক দর্শনার্থীরা দেখতে আসে। সূর্যমুখী ফুলের সাথে ছবি তুলে সময় কাটান বিনোদন প্রেমিরা। তা দেখে আমার হৃদয়ে আনন্দ লাগে। তাছাড়া আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এখন থেকেই অনেক চাষী বীজ চাচ্ছেন। এ বছর সূর্যমুখী চাষে ভালো সফলতা আসবে এবং অনেক লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জনি খান বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখী ফুলের আবাদ করেছেন চাষীরা। সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে অলিক অ্যাসিড। সূর্যমুখীর তেল শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাটযুক্ত। এর তেলে আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পানি। ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিগত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ বেড়েছে। নানাবিধ পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ সূর্যমূখীর তেল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদেরকে নানাবিধ ভাবে সু পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগীতা প্রদান করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর বীজ উৎপাদিত হবে ২০০ মেট্রিক টন। ৪ হাজার টাকা মণ প্রতি দরে যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, এ বছর জেলায় সূর্যমুখী বেশি ভাগই চাষ করা হাইব্রিড জাতের এবং বাংলাদেশ গবেষণাগার থেকে বারি-১৪ সূর্যমুখী কিছুটা ফসল উৎপাদন বেশি হয়। আর তেলের পরিমাণও বেশি থাকে। সব দিক বিবেচনা করে তেলের চাহিদা পূরণ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা যে, আমাদের দেশীয় তেলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। সে লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা রাজবাড়ী জেলায় কাজ করে যাচ্ছি এবং সরিষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত তেল জাতীয় সূর্যমুখীর চাষ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে