Dr. Neem on Daraz
Victory Day

চুরির পর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চাইলেন চোর


আগামী নিউজ | জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২২, ১০:৪০ এএম
চুরির পর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চাইলেন চোর

বরিশালঃ চুরি করতে গিয়ে টেরই পাননি যে সূর্য উঠে গেছে। যখন বুঝতে পারলেন ততক্ষণে দোকানের সামনে অনেক মানুষের আনাগোনা। ব্যাগভর্তি চুরির মালামাল নিয়ে বের হতে গেলে বিপদ। ধরা পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হতে পারেন— এমন শঙ্কায় সহায়তা চান ৯৯৯ এ কল করে। পুলিশ এসে বিপদে পড়া লোকটিকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যখন পেলেন তখন চোখ ছানাবড়া। শেষে দোকানখুলে সহায়তাপ্রার্থী চোরকে উদ্ধার করে আটক করা হয়।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের এআরখান বাজার সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ওইদিন বিকেলে চুরির মামলায় পুলিশ আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।

আটক ওই ব্যক্তির নাম মো. ইয়াছিন খাঁ (৪১)। তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ছিলারিশ গ্রামে। তবে বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে বরিশাল নগরীর কালুশাহ সড়ক এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

স্থানীয়রা জানান, চরকাউয়া ইউনিয়নের এআরখান বাজারের ঝন্টু হাওলাদারের মুদি দোকানের ভেতর থেকে বন্দর থানা (সাহেবেরহাট) পুলিশ এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। ওই সময় স্থানীয়রা কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। ওই ব্যক্তি কীভাবে তালাবদ্ধ দোকানে ঢুকেছে। কেনই বা পুলিশ তাকে উদ্ধারের জন্য এসেছে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে সবকিছু স্পষ্ট হয়।

উদ্ধারের পর ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানান, চুরির উদ্দেশ্যে তিনি ভোররাতে ঝাপের তালা ভেঙে দোকানে ঢুকেছিলেন। কিন্তু মালামাল চুরি ও তা নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগভর্তি করতে সময় গড়িয়ে সকাল হয়ে যায়। দোকানের সামনে লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যায়। তখন আর দোকান থেকে মালামাল নিয়ে পালানোর সুযোগ ছিল না। আর ধরা পড়লে জনতার হাতে মারধরের শিকার হবেন, এমন আশঙ্কা থেকে ৯৯৯-এ কল করে সহায়তা চেয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেট্রোপলিটন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, মো. ইয়াছিন খাঁ সকালে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে জানান, তিনি খুব বিপদে পড়ছেন। তাকে যেন দ্রুত পুলিশ এসে উদ্ধার করে। এসময় তাকে কনফারেন্সে রেখে ৯৯৯ থেকে বন্দর থানার (সাহেবেরহাট) ডিউটি কর্মকর্তাকে জানানো হয়- সম্মানিত একজন সিটিজেন বিপদে পড়েছেন। তাকে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নেন। এসময় কনফারেন্সে থাকা ইয়াছিন খাঁ তাকে কোথা থেকে উদ্ধার করার প্রয়োজন সেই ঠিকানা জানান। কিন্তু চুরি করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন, এ বিষয়ে ৯৯৯ বা ডিউটি কর্মকর্তাকে কিছুই বলেননি ইয়াছিন খাঁ।

ওসি আরও জানান, এরপর দ্রুত ঘটনাস্থলে একদল পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ সদস্যরা গিয়ে দোকানের ভেতর থেকে তাকে উদ্ধার করেন। তাকে উদ্ধারের সময় দোকানের মালামাল তছনছ করা ছিল। দোকানের দামি মালামাল ব্যাগে ভর্তি করা হয়েছিল। তার ওপর পুলিশের সন্দেহ হচ্ছিল। এরপর দোকান থেকে বের হতে তার অসুবিধা কোথায় জানতে চাইলে পুলিশ সদস্যদের ইয়াছিন খাঁ বলেন, চুরির মালামাল গুছিয়ে ব্যাগ ভর্তি করতে তার বেশি সময় লেগেছে। সময় গড়িয়ে সকাল হয়ে গেছে। লোকজন দোকানের পাশে অবস্থান করছিল। এ অবস্থায় সেখান থেকে বের হলে, তার রক্ষা হতো না। তার জীবনের ঝুঁকি ছিল। তার এসব কথা শুনে উদ্ধার করতে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা কিছুটা অবাক হয়েছেন। পরে তাকে একটি চুরি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান ওসি।


ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানান, মো. ইয়াছিন খাঁ দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন এলাকায় চুরির এ কাজ করছেন। বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক চুরির মামলা ও অভিযোগ আছে। চুরি করাকেই তিনি পেশা বানিয়েছেন। ওই টাকায় তার সংসার চলে।

দোকান মালিক ঝন্টু বলেন, পুলিশ আমার দোকানের কাছে এলেও কিছুই অনুমান করতে পারিনি। পরে দোকান থেকে একজনকে বের করায় বুঝতে পারি চোর ধরেছে। পরে জানতে পারি ওই চোর ৯৯৯-এ কল করে সহায়তা চেয়েছে। তিনি বলেন, দোকানের মালামাল কিছুই যায়নি। তবে সবকিছু এলোমেলো করে রেখেছে। ভালো ভালো জিনিস ব্যাগে ভরেছিল। কিন্তু নিতে পারেনি।

চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এ কল করে এক চোর নিজেকে ধরা পড়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছে বলে জেনেছি। ঘটনাটি নিয়ে সবখানে আলোচনা হচ্ছে। যে শুনছে সেই অবাক হচ্ছে।

এমএম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে