বরিশালঃ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বরিশাল শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন পুলিশ সদস্য কাওছার আহমেদ। সেই বাসার মালিকের মেয়ের সঙ্গে পরিচয় থেকে সখ্যতা। গড়ে ওঠে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক। মেয়ের পক্ষ থেকে বিয়ের চাপ দিলে টালবাহানা শুরু করেন কাওছার। ঘটনার বিস্তারিত পরিবারকে জানালে মেয়ের স্বজনরা কৌশলে তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকার ওই তরুণীর সঙ্গে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন কাওছার। নিজেদের মেয়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, এটি জানার পর তরুণীর পরিবারও বুঝে উঠতে পারছিল না, ঠিক কী করা উচিত।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) নগরীর বান্দরোড সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীরে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় কথা বলার জন্য কাওছারকে ডেকে নেন ওই তরুণী। এসময় তরুণীর সঙ্গে তার মা, খালা ও মামাও ছিলেন। সেখানে কাওছারের সঙ্গে তাদের দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। তারা কাওছারকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আশপাশের লোকজন সেখানে জড়ো হয়।
এক পর্যায়ে কীর্তনখোলা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পালানোর চেষ্টা করেন কাওছার। তরুণীর স্বজনরা স্থানীয়দের সহায়তায় ট্রলার নিয়ে মাঝনদীতে কাওছারকে ধরে ফেলেন। পরে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে তাকে তুলে দেন কোতয়ালী থানা পুলিশের হাতে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে কনস্টেবল কাওছার আহমেদকে আসামি করে থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কাওছারকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীকে ধর্ষণ সংক্রান্ত পরীক্ষার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মামলায় ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেছেন, পুলিশ সদস্য কাওছার আহম্মেদ গত জানুয়ারি মাস থেকে স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে বরিশাল নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ আলেকান্দা বুকভিলা গলিতে তার (বাদী) পিতার বাসার দোতলায় ভাড়া ওঠেন। এ সূত্র ধরে ওই তরুণীর সঙ্গে পরিচয় এবং কাওছার আহম্মেদের এক ব্যাচমেট পুলিশ সদস্যের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কথা বলে সখ্য বাড়ান। তবে পর্যায়ক্রমে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কাওছার নিজেই ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।
কোতোয়ালি থানা থেকে জানানো হয়, দুই মাস আগে তরুণীর অন্যত্র বিয়ে ঠিক হওয়ার পর অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর কাওছারকে জানালে সে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) কাওছার কীর্তনখোলার তীরে বধ্যভূমি এলাকায় রয়েছে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে আটক করেন তরুণী।
যদিও ওই এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দুপুরের দিকে গেঞ্জি পরিহিত (কাওছার) যুবককে দুই নারী ও একজন পুলিশ সদস্য (সাদা পোশাকে) এসে ধরে ফেলে। এসময়ে পুলিশ সদস্য ধরে ফেলা ব্যক্তিকে হাতে হ্যান্ড কাপ পরান। তখন আটক ব্যক্তি নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দেন। এ নিয়ে জটলা হয়। শেষে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক সদস্য হ্যান্ড কাপ খুলে দিতে বলে। হ্যান্ড কাপ খুলে দিলে দুই নারী ওই যুবককে ধরে রাখে। তবে তাদের হাত ফসকে দৌড়ে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন যুবক। ট্রলারযোগে সেখান থেকে গিয়ে উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়।
এমবুইউ