Dr. Neem on Daraz
Victory Day

আকাশে উড়ে গেলো হাওরের পানি, এলাকায় চাঞ্চল্য


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২২, ০৮:৪৭ এএম
আকাশে উড়ে গেলো হাওরের পানি, এলাকায় চাঞ্চল্য

মৌলভীবাজারঃ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে অদ্ভুত এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগরে অবস্থিত এই হাওরে টর্নেডো বা জলস্তম্ভ বা জলকুণ্ডলীর দেখা মিলেছে। হাকালুকির বার হালি চাতলা বিল নামক স্থানে হঠাৎ হাওরের পানি কুণ্ডলী পাকিয়ে আকাশে উঠে যায়। অবাক করা এ ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। 

৫০ বছরের মধ্যে হাওরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলেনি বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এমন দৃশ্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এটির দ্বারা কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

পানির ওপর শক্তিশালী টর্নেডো সৃষ্টি হলে প্রবলবেগে ঘূর্ণায়মান বায়ুর টানে পানি ঘূর্ণমান অবস্থায় উপরে উঠে যায়। একে বলে জলকুণ্ডলী।

স্থানীয়রা একে মেঘশূর বলে থাকেন। তারা একে ধ্বংসের প্রতীকও মনে করে থাকেন। আবার বিশেষজ্ঞদের মতে, জলকুণ্ডলী দেখতে টর্নেডোর মতো হলেও টর্নেডোর সঙ্গে এর মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। টর্নেডোতে থাকে বায়ু আর জলকুণ্ডলীতে বায়ুর পরিবর্তে থাকে পানি। জলকুণ্ডলী সাধারণত পানিতেই থাকে বলে জনপদে আহামরি ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালাতে পারে না। আর স্থলভাগের স্পর্শে আসলে এটি গুড়িয়ে যায়।

শনিবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় বড়লেখা উপজেলার সুজানগর বারহালি চাতলা বিলের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে এমন জলকুণ্ডলীর দেখা মেলে। হাকালুকিতে এমন দৃশ্য খুবই বিরল।

জুড়ী উপজেলার বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন জসিম বলেন, এমন দৃশ্য বেশ কয়েকবছর আগে হাকালুকিতে দেখা গিয়েছিল বলে শুনেছি। এরপর শনিবার এমন ঘটনা দেখলাম। জলস্তম্ভ দ্বারা কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

শনিবার বিকালে ঘণ্টাখানেক থেকে পরে অন্ধকারে বিলীন হয়ে যায় এটি।

স্থানীয়রা জানান, সৃষ্ট টর্নেডোতে হাকালুকির পানি জোয়ারের মতো টেনে আকাশে তুলে নেয়। আকাশ কালচে বর্ণ ধারণ করে বিজলী চমকে গর্জন করতে থাকে। জল আর আকাশে পানির পিলারের তৈরি হওয়া জলস্তম্ভ।

দেখতে হাকালুকির তীরবর্তী লোকজন কৌতুহল ভরে দেখেন। ওই সময় হাওরে উপস্থিত অনেকে ছবি তোলেন এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেকটা ঘূর্ণি তুফানের মতো পানি শোষণ করে আকাশে তুলতে থাকে বাতাসে সৃষ্ট জল পিলার। জলের ওপরে প্রবল বেগে ঘূর্ণায়মান গতি তৈরি হয়।

আবহাওয়াবিদরা জানান, জলভাগের পানি শোষণ করে উপরে তুলে সৃষ্ট টর্নেডো শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি। যে কারণে সেটি ছেড়ে দেয়। নয়তো সেটি ধ্বংসাত্মক হতে পারতো। স্থলভাগের সংস্পর্শে আসলে সবকিছু গুঁড়িয়ে দিতো।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, জলরাশিতে যেটা দেখা গেছে, সেটি মূলত টর্নেডো ছিল। এ ধরনের টর্নেডো অন্তত ১০-১২ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়। সেটি হয়তো আরও বেশি বিস্তৃত হতে পারতো। এছাড়া যে লোক ভিডিওচিত্র ধারণ করেছে, সেও এটার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারেনি, এর ঘূর্ণায়ন গতি বিস্তৃত হতে থাকলে নৌকাসহ তাকেও আকাশে তুলে উড়িয়ে নিতে পারতো। কয়েক বছর আগে নেত্রকোনা হাওরেও ১০-১২ কিলোমিটার জুড়ে এ রকম টর্নেডো সৃষ্টি হয়েছিল। তবে শক্তি সঞ্চার ঘটাতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তেমনি হাকালুকি হাওরেও ঘূর্ণায়মান তীব্র গতিতে পানি আকাশে উঠেছিল। সেটি কোনও দিকে মুভ করলে প্রলয়ঙ্করী হতে পারতো।

তিনি বলেন, এ দিন সাইক্লোন সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকায় একটি সেমিনার ছিল। ওই সেমিনারে জাপানের কাইটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রফেসর ড. শি থাইচি হায়াসি ও বাংলাদেশি আরেকজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তারা ঘটনাস্থল দেখতে ঢাকা থেকে সিলেটে এসেছেন। রবিবার তারা হাকালুকি হাওরে যাবেন।

প্রফেসর ড. শি থাইচি হায়াসের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এটি টর্নেডো ছিল। মূলত টর্নেডোর কারণে পানির ঘূর্ণিপাক সৃষ্টি হয় এবং স্তম্ভ বা পিলারের মতো আকাশে তুলে নেয়। যদিও হাওরাঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা সচরাচর দেখা মিলে না।

সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনা সত্য। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে এমন দৃশ্য এলাকার শত শত মানুষ দেখেছেন। অলৌকিক এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, আমি বিষয়টির খোজঁ নিচ্ছি। এমনটা হাওর এলাকায় হতে পারে।

এমবুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে