ঢাকাঃ অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ ও পুকুর খনন করে পানি প্রবাহে বাধা দেওয়ায় প্রতি বর্ষা মওসুমে নীলফামারীর সৈয়দপুরে আরেকটি ভবদহ বিলের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে প্রতি বছর আমন মওসুমে কুন্দল, কয়া ও সৈয়দপুর মৌজার কৃষকরা ৩০ কোটি টাকা মূল্যের ফসল থেকে বঞ্চিত থাকছে। শহরের কুন্দল গ্রামের দক্ষিণে সৈয়দপুর মৌজার দোলায় বর্ষাকালে পানি জমে ভবদহ বিলের আদলে বিল সৃষ্টি হয়। এতে পুরো বর্ষাকাল জুড়ে পানির নীচে থাকে তিন মৌজার কমপক্ষে এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। এসব মৌজা হল কুন্দল, কয়া ও সৈয়দপুর। ফলে আমন ফসলে মার খায় কমপক্ষে তিন হাজার ছোট বড় চাষী। তাদের ঘরে আসে না আমন ধান। যার পরিমাণ কমপক্ষে পনের হাজার মেট্রিক টন। বর্তমান বাজার মূল্যে টাকার অংকে দাঁড়ায় ৩০ কোটি টাকার মত। এমন অবস্থা চলছে গত ১০ বছর ধরে। দুর্ভোগের অবসান চেয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মিলেনি কোন প্রতিকার। এ অভিযোগ শত শত ভুক্তভোগী কৃষকের। বর্তমানে এই কৃষকরা শুধুমাত্র বোরো ফসল চাষ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
কথা হয় কামরুল হাসান, মজিবর রহমান, সামসুল, মোন্নাফ, লাল বাবুসহ একাধিক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সঙ্গে। তারা অভিযোগ করে বলেন, বর্ষাকালে শহরের রেললাইনের পশ্চিম পাশের পুরো এলাকা এবং কুন্দল, কয়া ও সৈয়দপুর মৌজার বৃষ্টির পানি সৈয়দপুর মৌজার দোলা হয়ে গিরিয়ার পুল দিয়ে ও খড়খড়িয়া নদীর শহর রক্ষা বাঁধের রেগুলেটর হয়ে পানি প্রবাহিত হতো। কিন্তু কাজীপাড়া ঈদগাহ মাঠ থেকে হঠাৎ বস্তি হয়ে পশ্চিম পাটোয়ারী পাড়া পর্যন্ত অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ করায় উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা পানি গিরিয়ার পুল অভিমুখে যেতে পারে না। আবার সৈয়দপুর মৌজার ১২৩ একর রেলওয়ের পতিত জমি যারা লিজ নিয়েছেন, তারা সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বড় বড় পুকুর খনন করেছে। এসব পুকুরে মাছ চাষ করতে গিয়ে পুকুরের চারধার মাটি দিয়ে করা হয়েছে উঁচু। যে যার মত করে এই পুকুরগুলো খনন করেছে।
এক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। ফলে বর্ষার পানি যে পথ দিয়ে খড়খড়িয়া নদীতে গিয়ে পড়তো, সেই পানি প্রবাহের পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়াও সৈয়দপুর শহর রক্ষা বাঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকর্তৃক নির্মিত রেগুলেটরের কপাট চুরি হয়ে যাওয়ায় সৈয়দপুর মৌজার দোলার পানি বর্ষাকালে প্রবাহিত হতে বাঁধার সৃষ্টি হয়। এর কারণটি হলো নদীতে পানি কম থাকলে রেগুলেটরের কপাট থাকে খোলা। ফলে দোলার পানি বর্ষাকালে নদীতে গিয়ে পড়ে। আবার নদী কুল বরাবর প্লাবিত হলে কপাট লাগিয়ে দেয়া হতো। এতে করে নদীর পানিও দোলায় প্রবেশে সৃষ্টি হতো বাধা। কিন্তু কপাট চুরি হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে ভরাট নদীর পানি ওই রেগুলেটরের মুখ দিয়ে উল্টো দোলায় প্রবেশ করে। তখনই পানি জমে গিয়ে সৈয়দপুর মৌজার গোটা দোলাটিতে পানি থৈ থৈ করে। সৃষ্টি হয় বিশাল আকৃতির বিল। বর্ষাকালের তিন দিনের ঝুম বৃষ্টিতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টি হলে আটকে যাওয়া ওই পানি গতি বদলিয়ে শহরের পূর্ব দিকে যেতে থাকে। এমন অবস্থায় শহরের আবাসিক এলাকার নিচু অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। হুমকির মুখে পড়ে বিমানবন্দর, সেনানিবাস, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাসহ পাঁচ শতাধিক ছোট বড় স্থাপনা। এমন অবস্থায় কৃষকরা পুরোদমে মার খাচ্ছে আমন ফসলে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। ফলে এক দশকে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কৃষকরা। অনেক প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক আমন ফসল বুনতে না পেরে পথে বসে গেছে। হাভাতে দিন কাটছে ওইসব পরিবারের সদস্যদের। প্রাকৃতিক ও মানুষ সৃষ্টি ওই দুর্যোগ থেকে বিভিন্ন দপ্তরে ও নেতৃত্ব স্থানীয়দের কাছে ধরনা দিয়েও কোন ফল বয়ে আনতে পারেনি বলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে তারা। ওইসব কৃষকদের দাবি, কুন্দল মৌজা থেকে শুরু করে কয়া মৌজা হয়ে সৈয়দপুর মৌজার শেষ সীমানা পর্যন্ত পরিকল্পিত ও যুগোপযোগী পানি নিষ্কাশন নালা তৈরী করে তা খড়খড়িয়া নদীর সঙ্গে যুক্ত করে দিলে হাজার হাজার কৃষক উপকৃত হবে। এজন্য তারা অনাহার থেকে বাঁচতে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানতে চাইলে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা বেগম জানান, আমরা ডিপার্টমেন্টগত ভাবে পরিদর্শন করেছি। এটি পৌরসভার নেতৃত্বে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে সমস্যা সমাধান হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈয়দপুর পওর বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ মো. আমিনুর রশিদ বলেন, কৃষকরা যাতে আমন ফসল চাষ করতে পারে বর্ষাকালে সেই সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী বিষয়টি সুরাহা করতে পরিষদগতভাবে সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানান।
এমবুইউ