Dr. Neem on Daraz
Victory Day

অল্প বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় ঘিওর বাজারের অলিগলি


আগামী নিউজ | জেলা প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২২, ০৮:৫৯ এএম
অল্প বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় ঘিওর বাজারের অলিগলি

মানিকগঞ্জঃ ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট-বাজারে বেহাল অবস্থা। মাত্র ৫ মিনিটের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারন করে। বাজারের প্রধান-প্রধান সড়কগুলো খানাখন্ডে ও যত্রতত্র ময়লা আর্বজনার দুর্গন্ধে বাজারে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। প্রধান-প্রধান সড়কগুলোতে আন্ডার গ্রাউন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নেই। নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হাট থেকে লাখ-লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করা হলেও ঘিওর পুরাতন গরু হাট, বেপারী পাড়া সড়ক, ঘিওর বাসষ্ট্যান্ড, কাচাঁবাজার, মাছ বাজার, কফিলউদ্দিন দরজী সড়কে ৫ মিনিটের বৃষ্টিতে পানি জমে চলাচলের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

পুরাতন গরুহাটায় মমিন বেপারীর দোকানের সামনে, বাস টার্মিনালে এবং বেপারী পাড়া সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারন করে। সমস্ত বাজারের আনাচে কানাচে ময়লা আর্বজনার পচা দুর্গন্ধে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি হাট বাজার থেকে নিয়োমিত ট্যাক্স, পাহারার চাঁদা, সুইপার ট্যাক্স আদায় করা হলেও ময়লা আর্বজনা ফেলার কোন ডাস্টবিন ও গণ শৌচাগার নেই। নেই নূর্নতম নাগরিক সুবিধা। রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছাকাছি উপজেলা হলেও উন্নয়ন নেই। কয়েকটি নলকুপ থাকলেও পানি পান করা নিরাপদ নয়। অধিকাংশ রাস্তাগুলো ইটের সোলিং করা। বিভিন্ন স্থানের ইট উঠে খানাখন্ডে চলাচল করাও কঠিন হয়ে পরেছে। বাজারে অধিকাংশ বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বাতি নেই। ফলে বাজারের ব্যবসায়ীসহ হাজার- হাজার লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

১৯৮৮-৮৯ সালের প্রথম দিকে মোহাম্মদ আলী সড়ক থেকে ভ’ষিপট্রি পর্যন্ত কিছু ড্রেন নির্মান করা হয়। অল্প দিনেই ড্রেনগুলো ভরাট হবার পরে সংস্কার না করার দরুন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পরে। সরেজমিন ঘিওর বাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বাজারে সমস্ত অলিগলিতে ময়লা আর্বজনায় ভরাট হয়ে গেছে। পুরাতন গরুহাট বাঁশপট্রি, মাছবাজার ও কসাইখানাটি নোংরা আর্বজনার গন্ধে ব্যবসায়ীরা ঠিকমত দোকানদারি করতে পারেনা। মশা, মাছির উৎপাতে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। কুস্তা গরু হাট সংলগ্ন ইছামতী শাখা নদীর পাশে প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে গরু,মহিশ, ছাগল জবাইয়ের জন্য ১টিশেড নির্মান করা হয়। গত বছর ধলেশ^রী নদীর ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে। গরুহাটার বাঁশপট্রিতে কসাইখানা ও মাছবাজার বসার জন্য প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২টি টিন শেড ঘড় নির্মান করা হয়। এগুলো ব্যবহার না করায় এলাকার একশ্রেনীর ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছে। শুষ্ট তদারকির না করায় শেডটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ঘিওর মধ্য বাজার থেকে মাছবাজার ও কসাইখানাটি দীর্ঘদিনেও সরানো হয়নি। যত্রতত্র গরু, ছাগল, খাসি জবাই করায় বাজারের পরিবেশ মারাত্মক দুষিত হচ্ছে। যত্রতত্র গবাদী পশু জবাই করায় দুর্গন্ধে সাধারন লোকজন চলাচল করতে পারেনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বাঁশপট্রি, ভূষিপট্রি, কফিল উদ্দীন দরজী সড়ক, পুরাতন কাপর হাটা, মাছবাজারসহ ৭/৮াট স্পটে সব সময় ময়লা আর্বজনার ভরাট থাকে। মিষ্টিপট্রি ও কাপর হাটায় ময়লা, আর্বজনার ভরাট থাকায় সরকারি ঘড়গুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পরেছে। অনেকে চান্দিনা ভিটি হিসাবে বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া দিচ্ছে। অনেকে পাকা স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ফলে বাজারের আয়াতন কমে যাচ্ছে। বাজারে পর্যাপ্ত নলকুপ, প্রসাবখানা, টয়লেট নেই। ২/১টি থাকলেও সেগুলো ব্যবহারের একেবারে অযোগ্য হয়ে পরায় বাজারের ব্যবসায়ীদের চরম অসুবিধা হচ্ছে। তবে বাজারের ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত নলকুপ, টয়লেট এবং রাস্তাগুলো কাপেটিংসহ সকল প্রকার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। তানা হলে আস্তে- আস্তে ঘিওর হাটের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে বলে বিশিষ্টজনরা ধারনা করেছেন।

এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৮৭০ সালে ভারতের ঘি-আগরওয়ালা নামে এক মারোয়ারী ব্যবসা বানিজ্যের জন্য ঘিওরে আসেন। ব্যবসার ফাঁকে- ফাঁকে তিনি বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলেন হাটের ব্যপারে। বহু কষ্ট করে তিনি এলাকার তৎসময়ে মুরুব্বিসহ গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বহু আলোচনা করেন। এক পর্যায়ে সকলের সম্মেলিত প্রচেষ্টায় পুরাতন ধলেশ্বলী নদীর পাশে হাটের স্থান নির্ধারন করেন। তবে তিনিই মুলতঃ ঘিওর হাটের নামকরন করেন। ১৮৭২ সাল থেকে হাট শুরু হয়। সে সময়ে বাজারে মাত্র ৬/৭টি দোকান ছিল। পুরো বাজারটি ধলেশ্বরী নদী দ্বারা পরিবেশষ্টিত ছিল। শিবালয় যমুনা নদী থেকে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে বড়- বড় ষ্টিমার, লঞ্চ, ছান্দি নৌকা, জাফরগঞ্জ হয়ে দৌলতপুরের ভীতর দিয়ে ঘিওর হাটে আসতো। এখান থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মালামাল নিয়ে ঢাকা- নারায়নগঞ্জ যেত। এ সময় পাট, ধান প্রচুর বিক্রি জন্য বিখ্যাত ছিল ঘিওর হাট। তবে নৌপথ একমাত্র চলাচলের বাহন ছিল। পরবর্তীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত কফিল উদ্দিন দরজী,ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব মোল্লা, ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ মিয়া, হরনাথ সরদার হাটটি পরিচালনা করতেন। তবে ৮০/৯০ দশকের দিকে ঘিওর হাট ব্যাপক জমজমাট ছিল। গরু, ছাগল, ধান, পাট,সহ বিভিন্ন কাঁচা মালের জন্য বিখ্যাত ছিল।

বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল মতীন মুসা জানান, বাজারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের সাথে বহু আলোচনা করেছি। আশা করছি অচিরেই বাজারের পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা কাজ শুরু হবে। বাজারের ঐতিহ্য সারাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত। কাজেই হাট বাজারের উন্নয়নে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ অহিদুল ইসলাম টুটুল জানান, বাজারের পানি নিস্কাশনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি অল্প সময়ে কাজগুলো শুরু হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হামিদুর রহমান জানান, আমি ইতোমধ্যে বাজার পরিদর্শন করেছি। বরাদ্দের জন্য উপরোক্ত কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। আশাকরি অচিরেই বাজারের পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এমএম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে