Dr. Neem on Daraz
Victory Day

দুপচাচিয়ায় ক্ষত-বিক্ষত নাগর নদে ফুলের হাসিতে ঢেকে গেছে নির্যাতন চিহ্ন


আগামী নিউজ | দেওয়ান পলাশ, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২, ২০২২, ১২:১৩ পিএম
দুপচাচিয়ায় ক্ষত-বিক্ষত নাগর নদে ফুলের হাসিতে ঢেকে গেছে নির্যাতন চিহ্ন

বগুড়াঃ প্রকৃতিঘাতকদের পাশবিক নির্যাতনে নাগর হারিয়েছে স্রোত। স্রোত হারিয়ে নাগদ আজ মৃতপ্রায়। স্রোতহীন মৃতপ্রায় নাগর নদের বুকজুড়ে বাসা বেধেঁছে কচুরিপানা। আর এই মৃতপ্রায় নাগর নদ মূগ্ধতায় ছুঁয়েছে কচুরিপানার ফুলের হাসিতে।

ক্ষত-বিক্ষত নাগর নদের বুকে স্রোতের পরিবর্তে স্থির হাটুজল। যতদূর চোখ যায়, ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে সেইজলের উপর ঝেঁকে বসা কচুনিপানা। কচুরিপানা ফুলের হাসিতে আড়ালে ঢেকে গেছে নদের বুকে পাশবিক নির্যাতন চিহ্ন।

অনুসন্ধান বলছে, একসময়ের উত্তাল নাগর নদ আজ প্রাণহীন। সেই স্রোত, নদের বুকে সারি সারি নৌকা, মাঝি মাল্লার গান সবকিছুই যেন সময়ের তোড়ে কল্পকাহিনী। শুধু তাই নয়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও নাগর নদের বুকে নৌকা ভাসিয়ে রচনা করেছেন সাহিত্য। রবীন্দ্র জীবনের ইতিহাসে স্থান করে নেওয়া সেই নাগর নদ হারিয়েছে যৌবন।

যৌবন হারানো ঐশ্বর্যহীন নাগর নদ আরও বেশি বিপন্ন হয়েছে অসাধু চক্রের বিষাক্ত থাবায়। নদের দু'পাশ দখল, কোথাও মাটি ভরাট, মাটি কাটা, বালু তোলা, কারখানার বিষাক্ত বর্জে দূষণ করাসহ বিভিন্নভাবে নাগর নদ কে মেরে ফেলার উপক্রম করেছে অসাধু চক্র। কখনও কখনও প্রশাসনিক তৎপরতায় অসাধু চক্র সাময়িক পিছু হটলেও নেই স্থায়ী সমাধান। অসাধু চক্র বার বার ফিরে আসে নাগর নদের বুক বিদর্ণ করতে। দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়ার পরানপুর, ভেলুরচক, পলিপাড়া এবং চামরুলের ঘাটমাগুড়া এলাকায় নাগর নদে অবৈধভাবে মাটিকাটা এবং বালু তোলা বন্ধে প্রশাসনের তরফে  কয়েকদফা অভিযান চালানো হলেও স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ হয়নি মাটি ও বালুদস্যূরা। কিছুদিন অসাধু চক্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সুযোগ বুঝে আবারও ফিরে আসে তারা।

নাগর নদের বিপন্নতার ইতিহাস এখানেই শেষ নয়। নাগর নদের দু'পাশে গড়ে ওঠা মাঝারি শিল্পকারখানাগুলির বিষাক্ত বর্জ ফেলা হয় নিয়মিত। বর্ষাকালে নদের পানির সাথে বর্জ মিশে পানি হয়ে যায় দূষিত। নদের ছোট ছোট মাছগুলি মরে ভেসে ওঠে। তাছাড়া ওই দূষিত পানি ফসলের জমিতে সেচ দিলে ফসল নষ্ট হয়ে যায় কৃষকের। নাগর নদের দু'কূল ভরাট করার ফলে অনেক জায়গায় এ নদ সরু নালার মত হয়ে গেছে। উপজেলার আলোহালী, পরানপুর, সঞ্জয়পুর এলাকাসহ সদরের কিছু এলাকায় ভরাট করে দখল করে নিয়েছে অসাধু চক্র। ফলে ভারী বর্ষনে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে সহজেই প্লাবিত হয় নাগর নদ। আবার খরা মৌসুমে নাগর নদ কে নদ না মনে হয় না। মনে হয়, এ যেন মৃত খাল।

উল্লেখ্য, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের কোল ঘেষে বয়ে চলা নাগর নদ করতোয়া নদীর একটি শাখা নদ। নাগর নদ বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের জগদীশপুরের নিকট করতোয়া নদী থেকে বের হয়ে প্রায় ১০ মাইল বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় প্রবেশ করে। তারপর দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের চামরুল, মোস্তফাপুর, পোড়াপাড়া, আটগ্রাম, দুপচাঁচিয়া ইউনিয়নের খোলাস,ধাপসুলতানগঞ্জ,সঞ্জয়পুর, আলোহালী এবং তালোড়া ইউনিয়নের তালোড়া রেলস্টেশনের পূর্বপাশ দিয়ে পরানপুর অতিক্রম করে সর্বশেষ নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায় প্রবেশ করে সিংড়া ব্রীজের নিকট আত্রাই নদীতে পড়েছে। নাগর নদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৫ মাইল।

এমএম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে