যশোরঃ জেলার শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেতনা নদী, খাল ও পুকুরের মধ্যে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও ফসলি জমি কেটে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধসে যাচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব ড্রেজার দিয়ে গ্রামাঞ্চলের খাল, বিল ও পুকুর থেকে যত্রতত্র ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। অন্যদিকে আবাদী জমি কেটে এ মাটি উত্তোলন করায় ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছে কৃষকরা। কয়েকমাস ধরে ড্রেজার মালিকরা এ অবৈধ কাজটি করলেও তা বন্ধে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই।
জানা গেছে, ড্রেজার দিয়ে উত্তোলনকৃত বালুর বেশিরভাগই স্থানীয় ঠিকাদাররা তাদের নির্মাণ কাজে ব্যবহার করে। সড়ক ও সরকারি স্থাপনার মেঝে ভরাট করা হচ্ছে এ বালু দিয়ে। তাছাড়া কম খরচে ও সহজ পদ্ধতিতে বালু পাওয়ায় ঠিকাদারদের পাশাপাশি বসতবাড়ি নির্মাণেও অনেকে পরিবেশ বিধ্বংসী এই ড্রেজার ব্যবহার করছে।
এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানালেও তা কোনো কাজে আসছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এভাবে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও এক্সভেটর মেশিনের মাধ্যমে মাটি উত্তোলনের কাজ চলমান রয়েছে। অবৈধ মেশিনগুলোর মালিকরা ঘুরে ঘুরে গ্রামের পরিত্যক্ত খাল, ডোবা ও পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করছে। উপজেলার লক্ষনপুর ইউনিয়নের বহিলাপোতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বিল থেকে দীর্ঘদিন অবৈধ ড্রেজার বসিয়েছে অহেদ আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। বিল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকিতে পড়েছে এলাকায় সাধারণ মানুষ ।
অপরদিকে লক্ষণপুর ইউনিয়নের বাজার সংলগ্ন ফসলি জমি থেকে এক্সভেটর মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করছেন নিজামপুর এলাকার চিন্তিত বালু ও মাটি ব্যবসায়ী সাহেব আলী ও সাইদুর রহমান।
উপজেলার কুলপালা গাতিপাড়ার ঈদগাহ মাঠের পাশে সরকারি বেতনা নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে অবৈধ ভাবে বালু তুলে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করছেন ঐ এলাকার প্রভাবশালী শাহাদৎ হোসেনের ছেলে সুমনসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ ভাবে বালু-মাটি উত্তোলন করারও অভিযোগ সুমনের বিরুদ্ধে।
এই বিষয়ে বালু উত্তোলনকারী অহেদ আলীকে পাওয়া যায়নি। মাটি উত্তোলনকারী সাহেব আলী ও সাইদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তাদের মুঠোফোনের নাম্বার বন্ধ বারবার বন্ধ পাওয়া গেছে। সুমন কথা না বলে সটকে পড়েন।
এলাকার অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কৃষি জমি নষ্ট করে দিনের পর দিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করে আসছে। আমরা অনেক বার বাধা দিয়েছি তাদের। তারা প্রশাসনের নাম করে আমাদের হুমকি ধামকি দিয়ে এভাবে বালু-মাটি উত্তোলন করে আসছে। দ্রুত বালু তোলা বন্ধ না করলে কিছুদিন পর বড় ক্ষতির মুখে পড়বো আমরা। কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। অনেক কৃষক হারিয়েছে তাদের আবাদী জমি। বালু ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। নিরবে আমরা দিন দিন কৃষি জমি হারিয়ে ফেলছি। বালু ও মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।
নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। শার্শার কুলপালা গাতিপাড়ার বেতনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করার ঘটনা জানতে পেরে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। কেউ বালু বা মাটি উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আগামীনিউজ/এমবুইউ