ফরিদপুর: জেলার মধুখালীতে দীর্ঘদিন ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে আব্দুল ওহাব মিয়া পাবলিক লাইব্রেরী নামের একটি পাঠাগার।
মধুখালী সদরে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মধুখালী ডায়বেটিক সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ মিয়া ব্যক্তি উদ্যোগে নিজস্ব মার্কেট মধুবনের তৃতীয় তলায় করোনা মহামারির মধ্যে গড়ে তোলেন এই লাইব্রেরী ।
এই লাইব্রেরীতে ইতিহাস-ঐতিহ্য, জ্ঞানবিজ্ঞানসহ সব ধরনের প্রায় দের হাজারের অধিক বই রয়েছে। গবেষকদের জন্য রয়েছে দুর্লভ জ্ঞানগর্ভ তথ্য-উপাত্ত ভান্ডার। তাছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সাময়িকী ও পত্র-পত্রিকার বিপুল সমাহার। এ পাঠাগারের বই পড়ে আলোকিত হচ্ছেন এলাকার শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণির মানুষ। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে অনেকে বই পড়ছেন এই পাঠাগারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রজীবনে নিজের বই পড়ার আগ্রহ থেকেই এই উদ্যোগ নেন আবু সাঈদ মিয়া। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রামীন জনপদের এই বাতিঘরে দিনে দিনে বেড়েছে বইপ্রেমি মানুষের আনাগোনা। নিজ্বস্ব অর্থায়নে তিনি ১০০০ স্কয়ার ফিটের ঘরে এ লাইব্রেরী গড়ে তোলেন। শিশু কিশোরদের বই থেকে শুরু করে ইসলামী, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য, বিনোদন, রাজনীতি, অর্থনীতি,উপন্যাস, প্রবন্ধ, রচনা সমগ্র, জীবনী, ছোট গল্প, কবিতা, ভাষাত্তর, দেশি-বিদেশি জ্ঞান বিজ্ঞানসহ সাহিত্যের প্রায় সকল শাখার বই রয়েছে এই পাঠাগারে। পছন্দের বই সহজে খুঁজে পেতে ক্যাটাগরি অনুযায়ী আলাদা আলাদা আলমারিতে সাজানো হয়েছে এ সকল বই।
শুধু বই পড়া নয়, পাশাপাশি নানা ধরনের জ্ঞান অন্বেষণী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এরমধ্যে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, প্রজ্ঞা মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ, বিতর্ক সভা, প্রকাশনা উৎসব, রচনা প্রতিযোগিতা, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, আবৃত্তি ও সাহিত্য, বিজ্ঞান ফোরাম সভাসহ অন্যান্য কার্যক্রম। তিনি লাইব্ররীর পাশাপাশি আবুল হোসেন কল্যান ট্র্যাষ্ট গঠন করেছেন। যেখান থেকে সমাজের গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীরা বুত্তি পেয়ে থাকে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবশ্রেণির পাঠকদের জন্য খোলা থাকে পাঠাগারটি। দীর্ঘদিন ধরে সমাজ আলোকিত করে প্রশংসিত হয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ পাঠাগারটি। স্থানীয় বইপ্রেমী লোকজনের সহায়তার পাশাপাশি জীবনের সময় ও উপার্জনের অনেক অংশই এ লাইব্রেরীর পেছনে ব্যয় করেছেন আবু সাঈদ মিয়া।
কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জীব রায় বলেন, লাইব্রেরীটি আদর্শ মানব তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সমাজে এ রকম লাইব্রেরী থাকাতে ব্যক্তিগত ভাবে আমি যেমন উপকৃত হয়েছি, তেমনি গ্রামের এবং গ্রামের বাইরে যারা আছেন তারা অনেকটা উপকৃত হচ্ছেন।
কাদীরদি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ নুরুজ্জামান মোল্যা বলেন, লাইব্রেরীটি জ্ঞানের আলো বিতরণ করছে। এতে করে সমাজ উপকৃত হচ্ছে, মানুষ জ্ঞান অর্জন করে ব্যক্তি জীবনে কাজে লাগাতে পারছেন। যুব সমাজ মাদকসহ বিভিন্ন অন্যায় থেকে বিরত থাকছে। জ্ঞানের আলো বিকশিত করার যে প্রচেষ্টা আবু সাঈদ মিয়া করে যাচ্ছে এটা প্রশংসার দাবি রাখে।
লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা আবু সাঈদ মিয়া বলেন, বই পড়তে আনন্দ পাই, বই পড়াতে আনন্দ পাই, সেজন্যই আমার এ প্রচেষ্টা। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আব্দুল ওহাব মিয়া লাইব্রেরীকে দেশের শীর্ষস্থানীয় গ্রামীণ পাঠাগারে পরিণত করার স্বপ্ন আমার।
তিনি আরও বলেন, আজকের যুবসমাজ সীমাহীন অনৈতিকতার দিকে ধাবিত। মাদক, পর্নোছবি ও ইন্টারনেট আসক্তিতে যুব সমাজ নিমগ্ন। এই যুবশক্তিকে ভালো বই পড়ায় উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ধ্বংসমুখী জীবনকে রক্ষা করাই অত্র পাঠাগারের লক্ষ্য।
আগামীনিউজ/ হাসান