ঝিনাইদহঃ হাসপাতালের বিছানায় অসুস্থ বাবা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তার সামনে ছেলেকে নিজের মুখে জুতার বাড়ি দিতে বাধ্য করেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান বিপাস। সেসময় বিপাসের পা ধরেও ক্ষমা চাইতে হয়েছে ওই তরুণকে। এ দৃশ্য দেখে আর সহ্য করতে পারেননি বাবা। যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১০ডিসেম্বর) বিকেলে তার মৃত্যু হয়।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন (৬২)।
ভুক্তভোগী ওই তরুণের নাম এস এম সরকার ওরফে হোসেন সরকার। তিনিও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের বাড়ি মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর গ্রামে।
মুখে জুতা মারার ঘটনার পর দুঃখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এস এম সরকার লিখেছিলেন, ‘মানুষ কখন আত্মহত্যা করে?’
বাবার মৃত্যুর পর তিনি কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু বলছেন, ‘ওরা আমাকে জুতা মারতে বাধ্য করার কারণে অসুস্থ বাবা খুব কষ্ট পেয়েছেন, যে কারণে তাকে বাঁচানো গেলো না।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে পা ধরে মাফ চাচ্ছেন হোসাইন নামে ওই আওয়ামী লীগ কর্মী। কথোপকথনের এক পর্যায়ে পা থেকে জুতা খুলে দেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি। হোসাইনকে নিজের গালে সেই জুতা দিয়ে আঘাত করার নির্দেশ দেন তিনি। নির্দেশ পালনে কয়েকবার নিজের গালে আঘাত করেন হোসাইন।
সম্পূর্ণ ঘটনাটি হাসপাতালের বেডে থাকা মৃত্যুপথযাত্রী বাবার সামনেই ঘটে। সেখানে মা ফাতেমা খাতুন বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুই করার ছিল না তার। ছেলেকে জুতাপেটা করতে দেখে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা।
অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওই ঘটনার পরপরই হোসাইনের বাবা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর সদর হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানায়, হোসাইন এলাকায় আওয়ামী লীগের নিবেদিত এক কর্মী হিসেবে পরিচিত। তার বাড়ি উপজেলার যাদবপুর গ্রামে। ঢাকায় ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটে আসেন তিনি।
হোসাইনের বোনের জামাই মোমিন জানান, মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ পা থেকে জুতা খুলে হোসাইনকে নিজের গালে আঘাত করার নির্দেশ দেন। নিরুপায় হয়ে কাজটি করেন তিনি। এর আগে পা ধরে মাফও চায়।
তিনি আরও জানান, যখন ঘটনাটি ঘটে তখন হোসাইনের বাবা মৃত্যুশয্যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। সোমবার বিকেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে বুধবার মহেশপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ফেসবুকে লেখালেখির সূত্র ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বিপাশের সঙ্গে হোসাইনের বিরোধ চলে আসছিল। সাবেক এমপি নবী নেওয়াজের সর্মথক তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাবা গিয়াস সরকারের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন হোসাইন। পরে সেখানে আসেন মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশসহ কয়েকজন। হোসাইনকে সহজেই বাগে পেয়ে যান তারা। শাস্তি হিসেবে করেন জুতাপেটা।
জুতা মারার ঘটনা সরাসরি অস্বীকার করেননি ছাত্রলীগ নেতা আরিফুজ্জামান। তবে ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, তারা ওই কর্মীর অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদ জানান, মহেশপুর হাসপাতালে মুমূর্ষু বাবার বেডের পাশে বসে পায়ের জুতা খুলে দিয়ে হোসাইন নামে এক কর্মীকে নিজের গালে আঘাত করতে বলেন মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ। এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি ওই ভিডিওটি দেখেছি। ঘটনাটি দুঃখজনক। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে আমরা আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
আগামীনিউজ/বুরহান