কিশোরগঞ্জঃ জন্ম তারিখ অনুযায়ী অনিকা জাহান সেতুর বয়স সাত বছর পাঁচ মাস ২২ দিন। কিন্তু জন্মের সনদপত্র অনুযায়ী তার বয়স এখন ১০৭ বছর পাঁচ মাস ২২ দিন। এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সেতুর পরিবার।
সেতু কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে পাকুন্দিয়া পৌরসভার সৈয়দগাঁও গ্রামের মো. ওয়াসিমের মেয়ে। পড়ালেখা করে পৌরসভার মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় নানার বাড়িতে থেকে।
সেতু ২০১৪ সালের ২৪ মে জন্মগ্রহণ করে। সেই অনুযায়ী তার ইপিআই টিকাদান কার্ডেও জন্ম তারিখ লেখা আছে ২৪ মে ২০১৪। কিন্তু পৌরসভা থেকে যে সনদপত্র দেওয়া হয়েছে তাতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। পৌরসভার জন্ম সনদে সেতুর জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ২৪ মে ১৯১৪। সেই হিসেবে জন্মের সনদপত্রে সেতুর বয়স ১০৭ বছর পাঁচ মাস ২২ দিন।
এ বিষয়ে সেতুর নানা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় তিন মাস আগে উপবৃত্তির জন্য সেতু স্কুলে আবেদন করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেতুকে জন্মের সনদপত্র আনতে বলেন। তখন সেতু বাড়ি এসে বিষয়টি তার মাকে জানায়। পরে আমি জন্ম সনদপত্র আনতে পৌরসভা কার্যালয়ে যায়। সেখান থেকে জন্মের সনদপত্র নিয়ে প্রধান শিক্ষককে দেই। তখন আমিও জন্ম সনদটি ভালো করে দেখিনি। জন্ম সনদপত্রটি দেখে প্রধান শিক্ষক জানান, এতে সেতুর বয়স ১০০ বছর বেশি লেখা হয়েছে। বিষয়টি সংশোধনের জন্য পৌরসভা কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন প্রধান শিক্ষক। তখন আমি পৌরসভা গেলে জানানো হয়, বয়স সংশোধন করতে হলে এখন আদালতে মামলা করতে হবে। পরে সংশোধনের জন্য পৌরসভায় আবেদন করতে হবে।
আমিনুল ইসলাম আরও জানান, এখন সেতুর জন্ম সনদ নিয়ে বিপাকে পড়েছি। আমি কোনোদিন আদালতের বারান্দায়ও যাইনি। এখন নাকি এটা পরিবর্তন করতে হলে আদালতে মামলা করতে হবে। আমি গরিব ও অভাবি মানুষ। এখন কি করে আমি আমার নাতির বয়স সংশোধন করবে?
মঙ্গলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমাছ উদ্দিন জানান, পৌরসভা কার্যালয়ের দায়িত্বরত ব্যক্তির জন্যই এ ভুলটি হয়েছে। এ ভুলের কারণে একটি পরিবারকে এখন আদালতেও যেতে হবে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে সেতুর ইপিআই টিকাদান কার্ডে তার যে জন্ম তারিখ লেখা আছে, ওই জন্ম তারিখ ঠিক রেখেই স্কুলে ভর্তি রেজিস্ট্রারে সেতুর জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া পৌরসভা কার্যালয়ের সচিব সৈয়দ শফিকুর রহমান জানান, সনদপত্র টাইপ করার সময় হয়তো ভুলবশত ২০১৪ এর জায়গায় ১৯১৪ লেখা হয়ে গেছে। তবে যেভাবেই হোক এটি কোনো ছোটখাটো ভুল নয়। এটি একটি বড় ধরনের ভুল হয়েছে। এতে মেয়েটির পরিবার মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে। আগে স্থানীয়ভাবেই এমন ভুল সংশোধন করা যেত। তবে এখন এটি আদালতে মামলা করে সংশোধন করতে হয়। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও স্যারের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া চেষ্টা করব।
আগামীনিউজ/শরিফ