Dr. Neem on Daraz
Victory Day

হাড় নেই, চাপ দেবেন না!


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২১, ১০:৩৮ এএম
হাড় নেই, চাপ দেবেন না!

ছবিঃ সংগৃহীত

চট্টগ্রামঃ স্বপ্ন ছিলো বড় চিকিৎসক হবেন, মুমূর্ষু মাহদী আকিবের সেই স্বপ্ন এখন পেন্ডুলামের মতো দুলছে আইসিইউতে। ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এই শিক্ষার্থী অনেকটা জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আঘাতে যার মাথা ভেঙে চুরমার; ব্যান্ডেজের উপর লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’!

মেধাবী এই শিক্ষার্থীর করুণ দশা যেনো ক্যাম্পাস ভিত্তিক সহিংস রাজনীতির জ্বলন্ত প্রতীক। ধবধবে সাদা ব্যান্ডেজের ওপর লেখা, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। নিচে এঁকে দেয়া হয়েছে একটি বিপজ্জনক চিহ্নও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহদী আকিবের এই ছবিটি কাঁদাচ্ছে প্রতিটি মানুষকে।

ছাত্রলীগের একপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত টগবগে এই তরুণ, গেলো দু’দিন ধরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চিকিৎসকরা জানান, হামলায় থেঁতলে গিয়েছিল আকিবের মাথা, ভেঙ্গে গেছে পেছনের অংশের হাড়।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আকিবের মস্তিষ্কে মারাত্মক জখম হয়েছে। এ ক্ষত সেরে উঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। পরবর্তী সময়ে তাঁর স্বাভাবিক চলাফেরা নিয়েও শঙ্কিত চিকিৎসকেরা।

চমেকের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ান রেহান বলেন, আকিবকে আরও ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। রাখার পর আশা করি সব ঠিক থাকলে বলতে পারবো তিনি বিপদ থেকে মুক্ত হয়েছেন।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কে ধাওয়া দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে ৮ থেকে ১০ জন। আকিবের সহপাঠীরা জানান, কাচের বোতল দিয়ে একের পর এক আঘাত করা হয় আকিবকে।

আকিবের সহপাঠী রভ দেব নাথ বলেন, যার জীবন দেয়ার কথা সে জীবন নিতে হায়েনার মতো লেগে থাকে। এখন বলতে হবে তাদের মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা নেই, ডাক্তার হওয়ারও যোগ্যতা নেই।

মানুষ বাঁচানোর ব্রত নিয়ে ছেলেকে আকিবকে চিকিৎসক হতে পাঠিয়েছেন বাবা গোলাম ফারুক মজুমদার। ছেলে এমন দুঃসংবাদে কুমিল্লা থেকে ছুটে এসেছেন তিনি ও তার স্বজনরাও। সেই ছেলের জীবন বাঁচাতে এখন তারা তাকিয়ে আছেন সৃষ্টিকর্তারা দিকে।

আকিবের চাচা কামাল মজুমদার বলেন, আমরা তো আসলে এখানে পাঠিয়েছি একটা ছেলে ডাক্তার হয়ে এখান থেকে বের হবে। এরকম হবে আমরা বা কোনো অভিভাবকেরই এটা কাম্য না।

এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী—ছাত্রলীগনেতা এনামুল হাসান সীমান্ত এবং রক্তিম দেকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সরোয়ার জাহান জামিন আবেদন নাকচ করে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।

এর আগে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতা তৌফিকুর রহমান। ঘটনার প্রতিবাদে চমেক ক্যাম্পাসে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগের একটি অংশ।

মামলার আসামিরা হলেন- সাদ মোহাম্মদ গালিব (২১), আহসানুল কবির রুমন (২১), জাহিদুল ইসলাম জিসান (২১), মাহাদি বিন হাশিম (২৪), আসিফ বিন তাকি (২৫), ইমতিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী (২১), মাহতাব উদ্দিন রাফি (২১), জাহিদুল আলম জিসান (২১), সৌরভ বেপারী (২১), মো. আনিস (২১), রক্তিম দে (২১), এইচ এম আসহাব উদ্দিন (২১), তানভীর ইসলাম (২১), নাজমুস সাদাত আসিফ (২১), এনামুল হাসান সীমান্ত (২১) ও রিজওয়ান আহমেদ (২১)।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চমেকে এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের গ্রুপ। নাছির চমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিও ছিলেন দীর্ঘদিন। গত বছরের ২০ আগস্ট এ পদে আসেন ব্যারিস্টার নওফেল। সে থেকে ধাপে ধাপে চমেক ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে নওফেল গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায়। ছোটখাটো সংঘর্ষের পর গত ২৭ এপ্রিল সিএমসি ক্যান্টিনে এক ছাত্রলীগ নেতাকে কটূক্তির ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে বড় সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। এ ঘটনার পর পাঁচলাইশ থানায় উভয় গ্রুপ পাল্টাপাল্টি মামলা করে। একইসঙ্গে চমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট ডাকেন। পরে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

সর্বশেষ গত শুক্র ও শনিবার সংঘর্ষের পর জরুরি বৈঠকে বসে প্রশাসন। বৈঠক শেষে মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

আগামীনিউজ/বুরহান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে