চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের একটি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো ধরণের ঝুঁকি এড়াতে সোমবার রাত ১০টা থেকে ফ্লাইওভারের এ অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। তবে মুরাদপুরের ষোলশহরের থেকে রাহাত্তারপুলের অংশে স্বাভাবিক রয়েছে যানবাহন চলাচল।
সোমবার রাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
সোমবার সন্ধ্যায় এক পথচারী ফাটলটি দেখতে পেয়ে ফেসবুকে সেটি নিয়ে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্ট পুলিশের নজরে আসার পর তারা বহদ্দারহাট মদিনা হোটেলের সামনের ফ্লাইওভার পর্যবেক্ষণ করে একটি পিলারের ওপরের অংশে বড় একটি ফাটল শনাক্ত করে।
সেখানে দেখা গেছে, র্যাম্প ও ফ্লাইওভারের সংযোগস্থলের কিছু নাট ঢিলে হয়ে গেছে। এর প্রভাবে র্যাম্প হালকা দেবে গেছে। ঘটনা শনাক্ত করার পরপরই মোহরার অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
ফাটলের খবর পেয়ে রাতেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় দুই কাউন্সিলর এবং চান্দগাঁও থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এসময় তারাও পিলারের নিচের অংশে থাকা অস্থায়ী দোকান ও বিভিন্ন গাড়িগুলো সরিয়ে দেন। পাশাপাশি একটি পিলারের অংশে ব্যারিকেড দিয়েও রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহীন বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল ধরেছে এমন সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। আপাতত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
চান্দগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) আশীষ কুমার পাল বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাটলের ছবি দেখে সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে গিয়েছি। নাট ঢিলে হয়ে র্যাম্প দেবে যাওয়ায় যানচলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে।
তিনি জানান, সিএমপির পক্ষ থেকে ব্যারিকেডের পাশাপাশি দুজন ট্রাফিক সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে ঘটনাস্থলে।
এই বিষয়ে জানতে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এম এ মান্নান ফ্লাইওভার (বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার) নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
নির্মাণের চার বছর পর এম এ মান্নান ফ্লাইওভারে আরাকান সড়কমুখী একটি র্যাম্প যুক্ত করেন সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। র্যাম্প ব্যবহার করে নগরের মুরাদপুর থেকে আসা গাড়িগুলো চান্দগাঁও ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের দিকে একমুখী চলাচল করে। পরে এই ফ্লাইওভারসহ চারটি ফ্লাইওভার ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চসিককে হস্তান্তর করে সিডিএ।
২০১২ সালের নভেম্বরে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের ঘটনায় ১৪ জন নিহত হলে এর নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।
আগামীনিউজ/নাসির