কক্সবাজারঃ উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় গুলি করে এবং কুপিয়ে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ ও ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় এজাহারনামীয় ৫ জনসহ ১০ আসামিকে গ্রেফতার করেছেন ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
রোববার (২৪ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) কামরান হোসেন।
তিনি জানান, শুক্রবার ভোরে ক্যাম্প-১৮ এর এইস-৫২ ব্লক অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল ইসলামিয়াহ’ মাদরাসায় অবস্থানরত ছাত্র-শিক্ষকের ওপর দুষ্কৃতিকারীরা হামলা চালায়। এ হামলায় ৬ জন নিহত হন। উক্ত ঘটনায় নিহত আজিজুল হকের বাবা নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ২৫ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০০/২৫০ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও জানান, ঘটনার খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্য ক্যাম্প ১১ এর আবুল কালামের ছেলে মুজিবুর রহমানকে দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটারগান ও ৬ রাউন্ড তাজা গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযানে চালিয়ে এজাহারনামীয় ৫ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। মুজিবুরের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে উখিয়া থানায় মামলা করে।
গ্রেফতার বাকি ৯ আসামিরা হলেন, ক্যাম্প-৮ এর আবু তৈয়বের ছেলে দিলদার মাবুদ ওরফে পারভেজ (৩২), সৈয়দ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আয়ুব (৩৭), ক্যাম্প ৯ এর নুর বাশারের ছেলে ফেরদৌস আমিন (৪০), মৌলভী জাহিদ হোসেনের ছেলে আব্দুল মজিদ (২৪), ক্যাম্প ১৩ এর আলী আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন (৩৫), আবু সিদ্দিকের ছেলে মোহাম্মদ ইউনুস ওরফে ফয়েজ (২৫), ক্যাম্প ১২ এর ইলিয়াছের ছেলে জাফর আলম (৪৫), ক্যাম্প ১০ এর ওমর মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ জাহিদ (৪০) ও মৃত নাজির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন (৪৮)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনদের দাবি, মুহিবুল্লাহর হত্যাকারী কথিত আরসার সন্ত্রাসীরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সংগঠনটির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রচারণা করা যাবে না বলে এর কয়েকজন নেতা হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ রোহিঙ্গারা হুমকি উপেক্ষা করে আরসার বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে মহল্লাভিত্তিক বৈঠক করে। বিভিন্ন বৈঠকে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন শুক্রবার নিহত হাফেজ মো. ইদ্রিসসহ আহতদের কয়েকজন।
রোহিঙ্গাদের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক মাদ্রাসাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে আরসা। সেই লক্ষ্যে প্রতিটি মাদ্রাসা পরিচালনায় দুজন আরসা সদস্যকে কমিটিতে রাখার প্রস্তাব দেয় তারা। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তাতে রাজি হননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ৮ এবিপিএন-৮ অধিনায়ক (এসপি) শিহাব কায়সার খান বলেন, যেসব বিষয় উঠে এসেছে, তা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অপরাধী রোহিঙ্গাদের কেউ আশ্রয় দিয়েছে-এমন প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবারের ঘটনার সঙ্গে মুহিবুল্লাহ হত্যার যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা অধিকতর তদন্তের বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ক্যাম্পে কর্মরত ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, এটি সঠিক। কিন্তু ক্যাম্পে কোনো দুর্বৃত্ত সংগঠনের অস্তিত্ব নেই।
অপরদিকে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিহত রোহিঙ্গা শীর্ষ নেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে আরও এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছে ১৪ এপিবিএন পুলিশ। তবে তার পরিচয় এখনও নিশ্চিত করেনি পুলিশ। মুহিব্বুল্লাহ হত্যায় এর আগে আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
আগামীনিউজ/বুরহান