Dr. Neem on Daraz
Victory Day

কুয়াকাটায় একই পরিবারে তিন প্রতিবন্ধী


আগামী নিউজ | রাসেল কবির মুরাদ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি  প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২১, ০৬:২৯ পিএম
কুয়াকাটায় একই পরিবারে তিন প্রতিবন্ধী

ছবি: আগামী নিউজ

পটুয়াখালীঃ জেলার  কুয়াকাটা পৌরসভায় একই পরিবারে তিন জন প্রতিবন্ধী। একজন প্রতিবন্ধীর আয়ের উপর নির্ভর করছে তিন প্রতিবন্ধীসহ ৬ জনের সংসার। একই ঘরে বসবাস করে বড় ভাইয়ের স্ত্রী দুই সন্তানসহ ৬ জন। যার ভিতরে ৩জন প্রতিবন্ধী। ভগ্নিপতি শ্রবণ প্রতিবন্ধী মফিজ ব্যাপারী দেখাশোনা করছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী জসিম উদ্দিন এবং মোসা: মোর্শেদাকে।

মূলত: তার আয়ের উপরই নির্ভর করছে এই ছয়জনের ভরনপোষণ। অভাবের সংসার হলেও কখনো সাহায্যর জন্য করো কাছে হাত পাতেনি পরিবারটি। শত কষ্টের মধ্যে দিন কাটালেও তারা ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করেন। সরকারের দেয়া প্রতিবন্ধী কার্ড আগেই বড়ভাই জসিম উদ্দিন পেয়েছিলেন। এ বছর তিনজনই এ সুবিধা পেয়ে খুশি তারা। তবে কেউ যদি তাদের ব্যবসা করার জন্য সহযোগিতা করে তাহলে তারা ব্যবসা করে এ সংসারটি চালাতে পারতো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুয়াকাটা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের খাজুরা গ্রামের জরাজীর্ণ একটি ঘরে বসবাস করে প্রতিবন্ধী ৩জন সহ মোট ৬জন। জসিম উদ্দিনের স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়ে রয়েছে। কিন্তু মফিজ ব্যাপারী এবং মোর্শেদা নি:সন্তান। তবে জন্মগতভাবে কেউ প্রতিবন্ধী ছিলেন না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তিন’জনের শরীরে দেখা দেয় নানান ধরণের সমস্যা। পরবর্তীতে বোন-জামাই মফিজ ব্যাপারী শ্রবণপ্রতিবন্ধী, বোন মোর্সেদা এবং ভাই জসিম উদ্দিন শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। শারীরিক প্রতিবন্ধী দু’জন অন্যের সহযোগীতা ছাড়া ঘরের এক মেঝে থেকে অন্য মেঝেতে চলাচল করতে পারেনা। এলাকার লোকজন মনে করছেন তাদের বাড়িতে খারাপ কিছু থাকার কারণে এই অবস্থা হয়েছে তাদের। কারণ হিসেবে তারা বলেন, অন্য যারা বাড়িতে থাকেন না। তারা ভালো আছেন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী বড় ভাই জসিম ব্যাপারী এ প্রতিনিধিকে জানায়, আমরা ১৪ ভাই-বোন ছিলাম, ১৩ নম্বরে আমি এবং ১৪ নম্বরে মোর্শেদা। এক সময় এই এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় নয় ভাইবোন বন্যায় মারা গেছে। পরে আমরা তিন ভাই দুই বোন জন্ম নিয়েছি। এক ভাই মারা গেছে এবং এক ভাই এক বোন অন্যত্র থাকে। কষ্ট করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছি। আমার দুইটি সন্তান। ছেলেটা কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু স্কুলে সেভেনে পড়ে। আর মেয়েটা মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। লেখাপড়ার মেধা ভালো। তাই শত কষ্টের মধ্যেও ওদের লেখা পড়া চালিয়ে নিচ্ছি।

জসিম উদ্দিনের ছোট বোন শারীরিক প্রতিবন্ধী  মোসা: মোর্শেদা এ প্রতিবেদককে বলেন, চলতে ফিরতে পারিনা। সরকারের সাহায্য সহযোগিতা আর বাহিরে কিছু কাজ করি তা দিয়ে চলি। কোন ব্যক্তি ব্যবসা করার জন্য কিছু টাকা দিয়ে সহযোগিতা করলে তাহলে আমরা একটু ভালোভাবে চলতে পারতাম। জসিম ব্যাপারীর ভগ্নিপতি শ্রবণ প্রতিবন্ধী মফিজ ব্যাপারীকে ইশারার মাধ্যমে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  আমার আয়ের টাকা দিয়ে ছয়জনের সংসার চলে। কাজ একদিন পেলে আবার দুইদিন পাইনা। তিনি আরও জানান, আজ ১৫ দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। তাই কাজ করতে যেতে পারিনাই। কানে শুনতে পাইনা তাই পরিচিত ছাড়া কেউ কাজ দেয়না।

কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: খলিলুর রহমান এ প্রতিনিধিকে জানায়, প্রতিবন্ধী জসিম উদ্দিন সম্পর্কে আমি জানি। কিন্তু তার সন্তান আমার বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তা আমার জানা ছিল না। তিনি আরও জানান, আজ থেকে এই শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার জন্য আমার বিদ্যালয়ে কোন টাকা দিতে হবে না।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গনমাধ্যমকে বলেন, জসিম উদ্দিন ব্যাপারীর পরিবার আসলেই অসহায়। পৌরসভায় যত ধরনের ত্রান আসে আমি তাদের জন্য রাখি। তিনি আরও জানান, বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রেখেছি। এছাড়াও ঐ পরিবারের ঘর দেয়ার ব্যাপারে আমি চেষ্টা করছি এবং পৌরভবনে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা রুম নির্মাণের ব্যাবস্থা করছি।

কলাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানায়, তিনজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ভাতা পান, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধীদের জন্য ঋণ কার্যক্রমের আওতায় তাদের আনার জন্য আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা করবো। এছাড়াও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ পাওয়া সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে