Dr. Neem on Daraz
Victory Day

রংপুর জেলা শিক্ষা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে সিন্ডিকেট বানিজ্যের অভিযোগ


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক,রংপুর প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১, ০৩:৫০ পিএম
রংপুর জেলা শিক্ষা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে সিন্ডিকেট বানিজ্যের অভিযোগ

ছবিঃ আগামী নিউজ

রংপুরঃ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর রংপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে টেন্ডার জালিয়াতি করে নিজের পছন্দমত ঠিকাদারকে কাজ দেয়া, কাজ না করেই পছন্দের ঠিকাদারকে বিল দেয়া, এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে অন্য ঠিকাদার দ্বারা কাজ করিয়ে কোটি কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এরকম নানা অভিযোগের তদন্তের দাবীতে দূর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগও করেছেন এক ব্যাক্তি। অভিযোগের একটি অনূলিপি দেয়া আছে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার অফিসে। 

অভিযোগ রয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যায়ে সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ০৩ টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় রংপুর জেলার মহানগরীর বিনোদপুর মৌজার ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপরীত পাশে জায়গা অধিগ্রহন করে ২০২০ সালের জুলাই মাসে দরপত্র আহবান করা হয়। টেন্ডারটির প্রাক্কলিত মূল্য ১৯ কোটি ১৮ লক্ষ ৬ হাজার ৮২৮ টাকা ২৯ পয়সা। ১৭ কোটি ২৬ লাখ ২৬ হাজার ১৪৫ টাকা ৪৬ পয়সার বিনিময়ে কাজটি পায় ঢাকার মালিখা-সম্রাট কন্সট্রাকশন।   

স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্টস অনুযায়ী, এধরণের কাজ গভর্মেন্ট, সেমি গভর্মেন্ট ও অটোনমাস প্রতিষ্ঠানে একই কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ঠিকাদারকে দেয়ার কথা। কিন্তু প্রায় ২০ কোটি টাকার এই বড় কাজটি করতে নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান তার নিজের পছন্দের ঠিকাদার কে কাজ দেয়ার জন্য আইন কে পাশ কাটিয়ে সরকারি নির্মান কাজের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল, আলুর কোল্ড স্টোরেজ, ওয়্যার হাউজ বা বিদ্যুৎ সাপ্লাই কাজের নির্মানের অভিজ্ঞতা যোগ করে দেয়। বাংলাদেশের টেন্ডার নোটিশে এটাই সর্বপ্রথম বিশ্ময়কর ঘটনা বলে জানা যায়। 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন প্রকৌশলী জানান, এটা সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্বমূলক কাজ। এতে প্রমানিত হয় যে, নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান তার নিজের পছন্দের ঠিকাদার কে কাজ দেয়ার জন্যই এই কাজটি করেছেন। এতে কমিশন বানিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের উদ্দ্যশে টেন্ডার ডকুমেন্টস পরিবর্তন করা হয়েছে। 

অভিযোগের ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, যারা এই কাজটা পেয়েছেন তারা খুবই যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ। ঢাকার ও পাবনার ঠিকাদার যৌথভাবে কাজ করছেন। ইজিপি টেন্ডার অনুযায়ী তারা ১০% লেসে কাজটা করছেন। তাদের সাথে আমার কোন পরিচয় নাই। আমার পরিচয় তো থাকার কথা রংপুরের ঠিকাদারের সাথে। ঢাকা থেকেই তাদের কাজ দেয়া হয়েছে। এখানে আমার কোন স্বার্থ নাই। 

নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন সাহেবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও শিক্ষাঙ্গন উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজ শুরুর আগেই ২০১৯ সালের জুনে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিল তোলা হয়। যদিও সাহেবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাটি পরীক্ষা করে বোঝা যায় ওখানে পাইলিং করতে হবে। ঢাকা থেকে পাইলিং অর্ডার আসে ২০২১ সালের জুনে। কিন্তু অর্ডার আসার আগেই বিল উত্তোলনকে ধামাচাপা দিতে প্রকৌশলীর নির্দেশনায় কাজ শুরু করে ঠিকাদার। হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে ঢিলেঢালাভাবে কাজ চলছে ৬তলা এই স্কুল বিল্ডিংয়ের। 

ঠিকাদারের সাথে কথা বলা হলে জানা যায়, সাহেবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজের জন্য এপর্যন্ত এক কোটি টাকার মতো বিল তোলা হয়েছে। কিন্তু এপ্রসঙ্গে প্রকৌশলী জানান, ৭৮ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। যাতে ছাদ পর্যন্ত কাজ করতে পারে। 

তবে পিপিআর নিয়ম অনুযায়ী, যতটুকু কাজ হয়েছে, ততটুকুই টাকা ঠিকাদার তুলতে পারে এর বেশি বা কম নয়।  রংপুর এবং গাইবান্ধা জেলার ০৪ টি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ০৬ তলা ভবন নির্মানের টেন্ডার ডকুমেন্টস পরিবর্তন করে নিজের পছন্দমত ঠিকাদার কে কাজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা কমিশন বানিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে আরো দেখা যায় যে, ১। টেন্ডার আই ডি নং  ৩৫৪০৯৬ আমিনা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,সুন্দরগঞ্জ,গাইবান্ধা ২। টেন্ডার আই ডি নং ৩৫৪০৯৭, সুন্দরগঞ্জ আব্দুল মজিদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,সুন্দরগঞ্জ,গাইবান্ধা ৩। টেন্ডার আই ডি নং ৩৫৭২০০ পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,পীরগঞ্জ,রংপুর ৪। টেন্ডার আই ডি নং ৩৪৯৩৩৪ রংপুর মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট , প্রতিটি ভবনের প্রয়াক্কলিত মুল্য প্রায় ৬- ৮.৫০ কোটি টাকা , পিপি আর  অনুযায়ী টেন্ডার ডকুমেন্টসে  লিকুইড এসেট চাওয়ার কথা প্রায় ৩ কোটি টাকা । কিন্তু লিকুইড এসেট চাওয়া হয়েছে  মাত্র ২২৫ টাকা। অভিযোগ উঠেছে শুধুমাত্র অসৎ উদ্দ্যেশেই এমনটা করা হয়েছে।

এ নিয়ে মুঠোফোনে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর রংপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ইজিপি সিস্টেম অনুযায়ী আমরা প্রয়াক্কলিত মূল্য থেকে ৫০%-৮০% লেস দিয়ে লিকুইড এ্যাসেট ধরি। ওটা আমরা ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ধরেছি। 

অভিযোগ রয়েছে রংপুরের এক পরিচিত ঠিকাদারের সাথে পার্টনারশিপে নামে বেনামে কাজ নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান। এরই মধ্যে রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়ায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বাড়িও করেছেন তিনি।  

অভিযোগ আছে নির্বাহী প্রকৌশলী রংপুরে যোগদান করেই নিজের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে যান। রংপুরের স্থানীয় ঠিকাদারদের বাদ দিয়ে টেন্ডার জালিয়াতি করে একের পর এক কাজ দিতে থাকেন পছন্দের ঠিকাদারকে ।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে