রাজবাড়ীঃ কঠোর লকডাউন যেন যেন ওদের জন্য এক অভিশাপ। দিনে যাদের ৩ থেকে ৪ শত টাকা আয় হতো এখন তাদের ১ শত টাকাও আয় হয় না। পরিবার পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে বালিয়াকান্দির মুচি সম্প্রদায়ের। এসকল নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমে গেছে। লকডাউন মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে তাদের জন্য।
উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন তারা। আবার কেউ কেউ পাড়া-মহল্লায় গিয়ে জুতা মেরামতের কাজ করেন। তবে লকডাউনে কাজ না থাকায় বেশিরভাগ মুচি ঘরে বসে আছেন। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বসলেও মিলছে না কাষ্টমার। অনেককেই মলিন মুখে বসে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। তবে তাদের কারো কাছেই করোনা ভাইরাসের জন্য কোন সুরক্ষা সরঞ্জাম দেখা যায়নি। নামেমাত্র সরকারী খাদ্য সামগ্রী পেলেও সেটা দিয়ে মাত্র কয়েকদিনই চলেছে তাদের।
কান্তি দাস। ৩০ বছর ধরে জুতা সেলাইয়ের কাজে যুক্ত। স্কুল জীবনে পা রাখা হয়নি তার। পূর্ব পুরুষের পেশা ছিল জুতা সেলাই করা। তারই ধারাবাহিকতায় দুই যুগেরও বেশি সময় আগে এ পেশার সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। একসময় কোনরকমে জীবনযাপন করলেও করোনার কারনে আর আগের মতো রোজগাড় নেই। এতে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তার মতো অনেকেই এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বাপ দাদার পেশা হিসেবে জুতা সেলাই কাজ শুরু করি দুই যুগ আগে। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ রেখেছিলাম। কয়েকদিন যাবৎ দোকানে খুলেছি। তবে প্রসাশনের কড়াকদিতে দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জন। অভাব অনটনে এখন দিন কাটাচ্ছি। একসময় ৩ শত থেকে ৪ শত টাকা আয় করতাম এই কাজ করে। লকডাউনের কারনে এখন ১ শত টাকাও আয় করাও সম্ভব না।
এই পেশায় নিয়োজিত দেবেন্দ্র নাথ দাস বলেন, আমি বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই বাবার কাছে এই কাজ শিখে বালিয়াকান্দি বাজারে দোকানদারি করে আসছি। এই জুতা সেলাই করেই চলে আমার সংসার। তবে করোনায় দোকান বন্ধ থাকায় সরকারি কিছু খাদ্য সামগ্রী পেলেও তা ছিলো আমাদের জন্য অপ্রতুল। লকডাইন চলায় মানুষ বাইরে আসে কম। আমাদেরও আায়ের পথ বন্ধ প্রায়।
কুমারেশ দাস বলেন, ‘আমার পরিবারে আমার স্ত্রী দুই মেয়ে, দুই ছেলে ও মাসহ মোট ৭ জন সদস্য। কামায় না থাকায় পরিবার নিয়ে দু’বেলা খাওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে কীভাবে এসব সুরক্ষা সরঞ্জাম কিনে ব্যবহার করব। ইনকামের অবস্থা খুবই খারাপ। কাজ একদম কম। লকডাউনের কারণে তো আগের মতো মানুষের চলাফেরা নাই। গতকাল সারাদিনে মাত্র একশ বিশ টাকার কাজ করছি। আজ সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল মাত্র অল্প কয়েক টাকার কাজ হয়েছে। তবে লকডাউনের আগে প্রতিদিন চারশ’ থেকে আটশ’ টাকা পর্যন্ত কাজ করতে পারতাম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আম্বিয়া সুলতানা বলেন, লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকায় মুচি সম্পদায়ের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিরতণ করা হয়েছে।