পটুয়াখালীঃ জেলার কলাপাড়ায় শিশু রবিউল মাত্র ৯ বছর বয়সেই প্রতিবন্ধী বাবার সাথে বাদাম বিক্রি করে সংসারের খরচ যোগাতে এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে। যে এখনই পরিবারের হাল ধরতে শিখছে। পুরান মহিপুর এলাকার ৯ বছর বয়সের শিশু মো: রবিউল ইসলাম বলে কেউ যদি পড়ালেহা করাইতে হেলে আর বাদাম বেঁচতে আইতাম না।
বাবা শহিদ সিকদার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাত-পা দুটোতেই শক্তি কম পান। তিনি নিজেও একজন বাদাম বিক্রেতা। দুই ভাইবোনের মধ্যে রবিউলই বড়। সে স্থানীয় মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। বিদ্যালয় খোলা থাকলে ক্লাস করে, বাকি সময় বাবার বাদাম বিক্রিতে সাহায্য করে।
শিশু রবিউলের কাছে কি হবে তার ভবিষ্যত জানতে চাইলে এ প্রতিনিধিকে বলে, বড় হয়ে আমি একজন বড় বাদাম ওয়ালা হতে চাই। কারণ জানতে চাইলে শিশুটি বলে আপনি কি আমারে পড়াইবেন? ছোট বোনটা ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আমারা বাদাম বেঁচা ছাড়া অন্য কিছু শিখি নাই। আমাদের কোন জায়গা-জমি নাই। কুয়াকাটা থেকে পটুয়াখালী এবং বরিশালগামী বাসে বাদাম বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েই আমরা চাল-ডাল কিনে খাই।
গত শুক্রবার কলাপাড়া পৌর শহরের ফেরিঘাট থেকে বাদাম বিক্রি করে ওয়াপদা অফিসের বিপরীতে নদীর পাড়ে পার্কের দিকে যাচ্ছিলো। এসময় গনমাধ্যম কর্মী মিজানুর রহমান বুলেট তার কাছ থেকে বাদাম কিনছিলো, বিভিন্ন প্রসঙ্গের একপর্যায় শিশু রবিউল জানায়, প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় শত টাকা বিক্রি হয় এবং এতে তার দুই শত টাকা লাভ হয়। বাদাম বিক্রির টাকা বাবার কাছে জমা দেয় এবং বাদাম বিক্রি করে দুটি গরু কিনেছেন। বাদামের সাথে ছোলাবুট-মটরভাজা বিক্রি করে প্রতি প্যাকেটের দাম রাখে দশ টাকা করে।
রবিউলের বাবা প্রতিবন্ধী শহিদ সিকদার এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি একজন প্রতিবন্ধী ও গরীব মানুষ ছেলেকে ঠিকমতো পড়ালেখা করাইতে পারিনা। ওর লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছে। কিন্তু একা বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। তিনি বলেন, রবিউলের জন্য দোয়া করবেন। বাদাম বিক্রির পাশাপাশি ওর অদম্য ইচ্ছা সে পড়ালেখা করতে ভীষন আগ্রহী।
মহিপুর ইউপির ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বর সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানায়, রবিউলকে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি। তার বাবা একজন প্রতিবন্ধী। সংসারে অভাবের কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি বাদাম বিক্রি করে সে, আমি ইউপি সদস্য হওয়ার পরে পরিষদ থেকে যতটা সম্ভব ওদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
কলাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান গনমাধ্যমকে বলেন, রবিউলের বাবা শহিদ সিকদার ইতিমধ্যেই সমাজসেবা থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। পরবর্তীতে হুইল চেয়ারসহ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ আসলে তার জন্য ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আগামী অর্থবছরে অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি বরাদ্দ আসলে শিশু রবিউলকে জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাধান্য দেয়া হবে।