শিশু আবিরের হত্যার বিচার চেয়ে মায়ের সংবাদ সম্মেলন
আগামী নিউজ | সোহেল রানা ডালিম, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২১, ০৫:০২ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ
চুয়াডাঙ্গাঃ এক লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হোসেনকে (১১) অপহরণ করা হয়েছিল। অপহরণকারীদের দাবিকৃত মুক্তিপণের টাকা দিতে চাইলেও সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি মা।
গত শনিবার মধ্যরাতে স্থানীয় একটি পাটক্ষেতে শিশুটিকে হত্যা করে মরদেহ ফেলে দিয়ে যায় দুষ্কৃতিকারীরা। হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলের সাস্তি ও হত্যাকারীদের হুমকি থেকে রক্ষ্যা পেতে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেছে শিশুটির মা রোজিনা খাতুন। আজ বুধবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রোজিনা খাতুন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমি একটি গরু বিক্রি করি এবং আমাদের এলাকার মেম্বর নূহনবী তা জানতে পেরে আমার কাছে চাঁদা দাবী করে। কিন্তু আমি তাঁদেরকে চাদা দিতে অস্বীকার করি। গত শনিবার (২৬ জুন) বিকেলে আমার ছেলে আবির হোসেন (১১) খেলাধুলা করতে বাড়ির বাইরে যায়।
এসময় মিনাপাড়ার নেম্বর নূহনবীর ইশারায় তার ছেলে হামীম (১৫) ও একই এলাকার মিরাজের ছেলে মুজাহিদ (১৬) পূর্বপরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেলযোগে আমার ছেলেকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়।
সন্ধ্যা হয়ে এলেও ছেলে বাড়িতে না ফেরায় আমরা তাকে খোঁজাখুজি শুরু করি। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে হামীম ও মুজাহিদ সন্ধ্যার পরে আমার স্বামীর মোবাইলে কল করে আবিরের মুক্তিপন হিসাবে এক লাখ টাকা দাবী করে। তখনও আমরা হাদের কথায় কোনরূপ কর্ণপাত ও বিশ্বাস না করে এলাকায় খোজাখুজি করার সময় জানতে পারি আমাদের এলাকার মেম্বর নূহ নবীর ছেলে হামীম ও মিরাজের ছেলে মুজাহিদ আমার ছেলেকে জোরপূর্বক অপহরণ করে মোটরসাইকেলগোগে তুলে নিয়ে আটকিয়ে রেখেছে।
এই খবর পাওয়ার পর আমরা মেম্বর নূহ নবীর বাড়ীতে গেলে নূহ নবী ও তার লোকজন আমার দেবর ও ভাইদেরকে গালিগালাজ ও মারপিট করে। এসময় তাঁরা আমাদেরকে হত্যার হুমকিও দেয়। আমরা নূহ নবীর ভয়ে বাড়িতে এসে পুলিশকে খবর দিই এবং পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পূনরায় মেম্বার নূহ নবীর বাড়ীতে যায়। এরই মধ্যে হামীম ও মুজাহিদ আমার ছেলে আবিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মাঠের মধ্যে ফেলে রেখে বাড়ীতে চলে আসে। আমরা পুলিশের সঙ্গে মেম্বরের বাড়ীতে পৌঁছে জানতে পারি হামীম ও মুজাহিদ ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে আছে। পুলিশ ঘর থেকে বাহির করে আবিরের কথা জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে তারা আমার ছেলে আবিরকে অপহরণ করেছে এবং মাঠের মধ্যে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।
ওইদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ মাঠের ভেতর থেকে আবিরের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা উক্ত আসামীগণ হামীম ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি নিই। তখন হামীমের পিতা মেম্বর নূহ নবী ও মুজাহিদের পিতা মিরাজ বিভিন্নভাবে আমাদেরকে ফোন করিয়া বিভিন্ন রকমের হুমকি-ধামকি এবং খুন করিবার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং মামলা দায়ের করিতে বাধা প্রদান করে। তাদের বাধা অবজ্ঞা করে আমরা মামলা দায়ের করার পর থেকে তারা আমাদেরকে জান-মালের হানীসহ খুন জখমের হুমকি ধামকি এবং আমাদের বাড়ি ঘরে বোম মারিয়া উড়াইয়া দিবে মর্মে প্রকাশ করছে।
নূহ নবী ও মিরাজ এলাকার প্রভাবশালী লোক এবং তারা বিভিন্ন প্রকার সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকায় গ্রামের লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কোনরকম মুখ খুলিতেছে না। এমতাবস্থায় আমি আমার সন্তানের হত্যাকারী হামীম ও মুজাহিদ এবং এদের সাথে জড়িত থাকা সকল আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ আমরা যাহাতে এলাকার সুষ্ঠুভাবে চলাচল এবং শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা দুষ্কার হয়ে পরেছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, রাজিব আহমেদ সর্দার, উজ্জল হোসেন, সাব্বির হোসেন, যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন, আকতারুজ্জামান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন এক লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হোসেনকে (১১) অপহরণ করা হয়েছিল। অপহরণকারীদের দাবিকৃত মুক্তিপণের টাকা দিতে চাইলেও সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি মা। ওইদিন মধ্যরাতে স্থানীয় একটি পাটক্ষেতে শিশুটিকে হত্যা করে মরদেহ ফেলে দিয়ে যায় দুষ্কৃতিকারীরা।
নিহত শিশু আবির হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরিষাডাঙ্গা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আসাদুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে আসাদুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুন তার বাবা রেজাউল হকের বাড়ি গাংনী উপজেলার মিনাপাড়াতে থাকেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ষোলটাকা ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) নুহু নবীর ছেলে স্কুলছাত্র হামিম হোসেন (১৫) ও মিরাজ হোসেনের ছেলে মুজাহিদকে (১৬) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।