যশোরঃ জেলায় কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। লকডাউন নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনার রুপ আরও ভয়ংকর হতে পারে।
শুক্রবার জেলায় আরও ৩১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে করোনায় ৭ জন ও উপসর্গে ৭ জন মারা যান। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিস এই তথ্য জানিয়েছেন। এরআগে একদিনে এতো পরিমাণে আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়নি।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় রেডজোনে মৃত ৩ জন হলেন যশোর শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়ার নজরুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা পারভীন (৪৬), চাঁচড়া এলাকার শেখ খোরশেধ আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭০) ও ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পাগদি গ্রামের রহিম বক্সের ছেলে আবুল হোসেন (৬৫)। ইয়োলোজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ জন মারা যান। তারা হলেন, যশোর শহরতলী নিউমার্কেট এলাকার গোলাম মোস্তফার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৫২), সদর উপজেলার জামতলা গ্রামের মৃত বারেক মোল্যার ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (৬১), নারায়নপুর গ্রামের আবু তালেবের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৮০), চাউলিয়া গ্রামের কালু শেখের স্ত্রী কোহিনুর বেগম (৫৫), ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের আজিজার আলীর ছেলে আমিনুল ইসলাম (৫২), গদখালী গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে ফারুখ হোসেন (৫২) ও কায়েমখোলা গ্রামের হুদাই মন্ডলের ছেলে তোফাজ্জেল মন্ডল (৭৮)।
সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় মারা যান অভয়নগর উপজেলার আনোয়ারা বেগম (৬৫), মণিরামপুর উপজেলার রবিউল ইসলাম (৪০), আব্দুল মুজিদ (৭৫) ও কেশবপুর উপজেলার আজিজ মোড়ল (৬৫)। এদের মধ্যে হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিউল ও মুজিদ, খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজিজ মোড়ল ও আনোয়ার অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ডা. রেহেনেওয়াজ আরও জানান, শুক্রবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ৫২৮ টি নমুনায় ৩১৩ জন ও খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) ল্যাবে ১২ টি নমুনা পরীক্ষায় ৩ জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এদিন সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কারো র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষা করা হয়নি। দুই ল্যাবে ৫৪০ টি নমুনা পরীক্ষায় ৩১৬ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১০৭ জন, কেশবপুর উপজেলায় ১৮ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ২৮ জন, অভয়নগর উপজেলায় ৬৩ জন, মণিরামপুর উপজেলায় ১৫ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১১ জন, চৌগাছা উপজেলায় ৩৩ জন ও শার্শা উপজেলায় ৪১ জন ও রয়েছেন।
যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে শুধুমাত্র যশোর জেলার ৫২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অন্য কোন জেলার নমুনা পরীক্ষা হয়নি। যশোর সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ২৫ জুন পর্যন্ত যশোর জেলায় ১০ হাজার ৩শ’ ৫৪ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১২৪ জনের। এছাড়া ঢাকায় ৬ জন খুলনায় ৭ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১জন। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রেডজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত ৩ জনের হিসাব এখনো তার কাছে দেয়া হয়নি।
সিভিল সার্জন আরও জানান, করোনা সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশ পার হয়েছে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, জেলার সাথে করোনা রেডজোনেও রোগী বাড়ছে। ৮০ শয্যার বিপরীতে শুক্রবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত ৮১ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে আরও বেড়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে ইয়োলোজোনে। সেখানে ১৯ শয্যার বিপরীতে তিনগুন বেশী রোগী রয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দেয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। যশোরের জেলা প্রশাসক জানান, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া সব ধরণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।