Dr. Neem on Daraz
Victory Day

যশোরে করোনার ভয়ানক সংক্রমণে দুই পৌরসভা লকডাউন!


আগামী নিউজ | বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২১, ০৮:৫৭ পিএম
যশোরে করোনার ভয়ানক সংক্রমণে দুই পৌরসভা লকডাউন!

ছবি: আগামী নিউজ

যশোরঃ জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। প্রতিদিন ভাঙছে আক্রান্তের রেকর্ড । গত ২৪ যশোরে ভারত ফেরত ২ জনসহ নতুন করে আরও ১২২ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রেডজোনের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ২ জনসহ করোনায় আক্রান্ত তিন জন মারা গেছেন। জনসাধারণের সচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার প্রতি অনীহা, আক্রান্তদের থেকে স্বজনদের সঙ্গরোধ না-করার কারণেই মূলত দিনদিন সংক্রমণের ভয়াবহতা বাড়ছে। 

এ দিকে, করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় মঙ্গলবার (৮জুন) জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সকল ওয়ার্ডে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ (লকডাউন) করাসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খুব শিগগির গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) কাজী মোহাম্মদ সায়েমুজ্জামান।

সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ২১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৫ জন ও খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) ল্যাবে ১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলায় ৭৫ জনের র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ৩৫ জন পজেটিভ হয়েছেন। অর্থাৎ ৩০০ জনের মধ্যে ১২২ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে।  জেনোম সেন্টার ও খুমেকে শনাক্ত ৮৭ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৪ জন, শার্শা উপজেলায় ৬ জন, চৌগাছা উপজেলায় ৪ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৬ জন, মণিরামপুর উপজেলায় ৩ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ২ জন, ও অভয়নগর উপজেলায় ১২ জন রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ২ জন ভারত ফেরত রয়েছেন। তারা দুজনই যশোর শহরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রেডজোনে পাঠানো হয়েছে।

 যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, ৬ জুন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার জহুরুল হককে (৫৫) করোনা সন্দিগ্ধ হিসেবে ইয়োলো জোনে ভর্তি করা হয়। ৭ জুন নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে তার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট বাড়ার কারণে তাকে পাঠানো হয় আইসিইইউতে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেল ৬টার দিকে তিনি (জহুরুল ইসলাম) মারা যান। এরআগে রাত ৩ টার দিকে মারা যান যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের জিয়াউর রহমান জিয়া (৪০)। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪ জুন তিনি হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি হয়েছিলেন। শ্বাসকষ্ট হলে তাকে আইসিইউতে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জিয়াউরের। 

এদিকে, ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. রাশিদুল আলম জানান, গত ৫ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের মাঠপাড়ার কাশেম মোল্যার স্ত্রী  খোদেজা বেগম। তিনি নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তিনি মারা যান।  

যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, মঙ্গলবার জেনোম সেন্টারে যশোরে ৮৫ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ১৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জন ও  নড়াইল জেলার ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬ জনের করোনা পজেটিভ হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন জেলার মোট ২৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৩ জন পজেটিভ ও ১৭৯ জনের নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে। 

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) কাজী মোহাম্মদ সায়েমুজ্জামান জানিয়েছেন, যশোর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে যশোর ও নওয়াপড়া পৌরসভার সকল ওয়ার্ডে  কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা ছাড়াও গণসমাবেশ ও অনুষ্ঠান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ,মোটরসাইকেলে ১ জন, রিকশায় ১ জন ও অটো রিকশায় দুই জনের বেশি চলাচল করতে পারবেনা। এছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, বাজারে স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনের উপর জোর দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই বিষয়ে শিগগির গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম জানিয়েছেন,  করোনা সংক্রমণের সাথে উদ্বেগ বাড়ছে। এই মুহুর্তে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প কিছু নেই। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় নেয়া সিদ্ধান্তগুলো যদি কেউ না মেনে চলে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন আরও জানান, পরিসংখ্যানের হিসেব অনুযায়ী ৮ জুন পর্যন্ত যশোর জেলায় ৭ হাজার ৫শ’ ৫২ জন কোভিডে নভেল আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৯৫ জন নারী পুরুষ। এর মধ্যে যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। আর ঢাকায় ৬ জন খুলনায় ৫ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১জন। জহুরুল ইসলাম ও খোদেজা বেগমের মৃত্যুর হিসেব এখনো তার কাছে পাঠানো হয়নি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের পর থেকে যশোরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঈদের আগে আক্রান্তের হার ছিলো শতকরা ৯ থেকে ১০ ভাগ। বর্তমানে গড় আক্রান্ত শতকরা ৩০ ভাগ ছাড়িয়েছে। এনিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। মানুষের মধ্যে সচেতনতা না থাকায় হু হু করে করোনার সংক্রমণ বাড়ার জন্য দায়ী। যশোর শহরের দড়াটানা থেকে চুড়ামনকাটি ও সাতমাইলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া  থ্রি-হুইলার (পিয়াজু) গাড়িতে ৮ থেকে ৯ জন করে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে ঠিকই বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। চালকের পাশে ২ জন, মাঝে ৩ জন ও পিছনে অনেক সময় ৪ জন যাত্রী নেয়া হচ্ছে। সূত্রের দাবি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে পিয়াজু চালকরা সরকারের স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাড়তি যাত্রী নিচ্ছে। বিষয়টির উপর জেলা প্রশাসনের নজর দেয়া প্রয়াজন।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে