ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ সুস্বাদু ফলের নাম লিচু। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে দিন দিন বাড়ছে এর ফলন। বিরূপ আবহাওয়ায়ও চলতি মওসুমে জেলায় লিচুর আশানুরূপ ফলন হয়েছে। চাষীরা জানিয়েছেন বাজার দর ভাল থাকায় তারাও লাভবান।
লিচুসহ ফলনবিদ ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে খরার প্রকোপ কাটাতে বাগান মালিকদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট সহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ার কথা। কৃষি বিভাগ আশা করছে চলতি মওসুমে জেলায় প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকার লিচু উৎপাদিত হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০১ সাল থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর বাণিজ্যিক ভাবে লিচুর চাষ শুরু হয়। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য উপযোগী। জেলার সীমান্তবর্তী কসবা, আখাউড়ায় ও বিজয়নগর এ তিন উপজেলায় লিচুর আবাদ হয়। তার মধ্যে বিজয়নগরে আবাদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী। চলতি মওসুমে অন্তত ৫ শ ১০ হেক্টর জমিতে এবার লিচুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৩০ মেঃ টন।
বিজয়নগরের লিচু স্বাদে মিষ্টি ও রসালো। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে এর বেশ কদর রয়েছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় এপ্রিলের মধ্যবর্তী সময়ে লিচুর ফলন হলেও বিজয়নগর উপজেলায় মে মাসেই লিচু বাজারে চলে আসে।
উপজেলার আউলিয়া বাজার, সিংগারবিল, হরষপুর, চান্দুরা, বিষ্ণুপুর, ছতরপুর, আজমপুর, চম্পকনগর বাজারে লিচু বিক্রি হয়। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা পায়কারি দরে লিচু কিনে পিকআপ ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যান। তবে লিচু কেনার পর ব্যবসায়ীদের বাজারের ইজারা বাবদ ২০০ থেকে ৬০০ টাকা করে দিতে হয়।
এখানে উৎপাদিত লিচুর মধ্যে পাটনাই, চায়না-৩ ও বোম্বাই উল্লেখযোগ্য। ইতোমধ্যে পাটনাই জাতের লিচুর সংগ্রহ শুরু হয়েছে। গুনগতমান ভাল ও বিষমুক্ত হওয়ায় ও এখানকার লিচুর কদর দিন দিন বাড়ছে। প্রতি হাজার লিচু বাগানে থেকে প্রকার ভেদে ১৫ শ থেকে ২৫শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট বড় মিলিয়ে জেলায় ৪২০ টি বাগান রয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ায় লিচুর ভাল ফলন পেয়ে কৃষকরা খুশি।
বিজয়নগরের লিচু চাষীরা জানান, লিচুর উৎপাদন ভাল হয়েছে। পাশাপাশি দামও ভাল পাওয়া যাচ্ছে। তবে খরার কারণে লিচুর বৃদ্ধি কিছুটা কম হয়েছে। যে কারণে বিভিন্ন সাইজের লিচুর দাম ও বিভিন্ন রকম। কিছু লিচু ১শ পিস ১৮শ টাকা আবার কিছু লিচু ১৫শ টাকা থেকে ২৫শ পর্যন্ত একেক দরে বিক্রি হয়।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাদিউল ইসলাম জানান, করোনা কালীন সময়েও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে লিচু চাষীদের পরামর্শ প্রদানসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে। চলতি মওসুমে খরার কারণে অনেক বাগান মালিক হতাশায় ভুগছিলেন কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসের টেকনিক্যাল পরামর্শের কারণে এ বছরও লিচুর আশানুরুপ ফলন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক রবিউল হক মজুমদার জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনের অবস্থা খুবই ভাল হয়েছে। চলতি মওসুমে ১ হাজার ৫৩০ মেঃ টনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল সে অনুপাতেই উৎপাদন হবে। আমরা আশা করছি আবাদ বাড়ার পাশাপাশি চলতি মওসুমে জেলায় প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকার লিচু উৎপাদিত হবে।