Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনায় বন্ধ থাকা লঞ্চ শিল্প ধ্বংসের মুখে


আগামী নিউজ | বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২১, ০১:২৬ পিএম
করোনায় বন্ধ থাকা লঞ্চ শিল্প ধ্বংসের মুখে

বরিশালঃ করোনাভাইরাসে বন্ধ থাকায় ধ্বংসের মুখে দেশের লঞ্চ শিল্প। মাসের পর মাস ধরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় এক টাকাও উপার্জন নেই। বিপরীতে লাখ লাখ টাকা ব্যাংকের কিস্তি, শ্রমিকদের বেতনসহ আনুসঙ্গিক বিভিন্ন খরচ। চরম বিপাকে রয়েছেন বরিশালের লঞ্চ মালিকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশের সবচেয়ে বড় নৌরুট হচ্ছে ঢাকা-বরিশাল নৌরুট। স্বাভাবিক ভাবেই এ রুটকে কেন্দ্র করে যাত্রী সেবায় যুক্ত হয়েছে বিলাশ বহুল সব লঞ্চ। একক দৃষ্টিতে শুধু লঞ্চ ব্যবসায়ী নয়, দিনে দিনে এটি একটি শিল্পতে রুপ নিয়েছে। ফলশ্রুতিতে বরিশালে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। এসব অত্যাধুনিক নৌ-যান আঞ্চলিকভাবে এসব ডক ইয়ার্ডেই তৈরী করা হয়েছে। এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে হাজার হাজার শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমানে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে আটটি কোম্পানীর ২৩টি লঞ্চ চলাচল করছে। প্রায় সবগুলোই তিন থেকে চারতলা বিশিষ্ট। অত্যাধুনিক লঞ্চগুলো তৈরী করতে ব্যয় হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। যারমধ্যে অর্ধেকেরও বেশী অর্থ্যাৎ ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা থাকে ব্যাংক ঋণ। মাসিক ও ত্রৈমাসিক হিসেবে কিস্তি পরিশোধের চুক্তিতে উচ্চ সুদে সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকেন মালিকরা। ঋণের ধরণ হিসেবে প্রত্যেক লঞ্চ মালিককে মাসে লাখ লাখ টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। অথচ করোনার কারণে দীর্ঘসময় উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও ব্যাংক তথা ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কিস্তি স্থগিতও করেনি বা সুদের হারও কমায়নি। এমন অবস্থায় এক কথায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন লঞ্চ মালিকরা।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারী প্রনোদনাসহ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে কোনভাবেই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। তাদের দাবি স্বল্প সুদে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের ঋণ প্রদান করা হোক। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, লঞ্চ মালিকদের প্রণোদনার বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই লঞ্চ মালিকদের সাথে বসে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের স্বত্ত্বাধীকারি আলহাজ্ব সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ধরনের প্রনোদনা দিয়েছে। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা সরকারের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। অথচ অগ্রাধিকার হিসেবে লঞ্চ শিল্প সর্বাগ্রে প্রাপ্য ছিলো। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক লঞ্চ মালিকের শত কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ রয়েছে। যাদেরকে নির্দিষ্ট হারে এসব ঋণ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু গত একবছর ধরে উপার্জনই নেই। তাহলে আমরা কিভাবে চলি।

মেসার্স সালমা শিপিং ও কীর্তনখোলা লঞ্চের স্বত্ত্বাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ সেক্টরে প্রণোদনা দিয়েছে কিন্তু লঞ্চ শিল্প কোন ধরনের প্রণোদনার আওতায় আসেনি। তাহলে আমরা বা এই শিল্প কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি? তিনি আরো বলেন, দিনের পর দিন অচল অবস্থায় পড়ে থাকলে লঞ্চের মেশিনারিজসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের ক্ষতি সাধিত হয়। ধারদেনা করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছি, ঋণের কিস্তি দিচ্ছি কিন্তু এভাবে আর সম্ভব হচ্ছে না। সহসাই আমাদের দিকে সরকার না তাকালে আমরা নিশ্চিত দেউলিয়া হয়ে যাবো। আমাদের একটাই দাবি স্বল্প সুদে দ্রুত ঋণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হোক।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লঞ্চ মালিকদের প্রনোদনার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টির সমাধান হবে। এজন্য বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি তিনি লঞ্চ মালিকদের নিয়ে বসে আলোচনা করবেন। তারপরই সিদ্ধান্ত হবে কি ধরনের প্রনোদনা প্রদান করা হবে।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে