ঈদ নিয়ে আসে কারো জীবনে কষ্টের বার্তা
আগামী নিউজ | মোন্তাশির পারভেজ প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২১, ১১:৫৩ এএম
ছবি সংগৃহীত
পবিত্র ঈদুল ফিতর। দিনটি অনেকের কাছে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসলেও আমার কাছে নিয়ে আসে কষ্টের বার্তা! এই দিনটিই আমার জীবনের সব থেকে কষ্টের দিন।
কারন আমার বাবা ২০১৬ সালের ৩০ শে রমজান সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হবার পর এই ঈদুল ফিতরের দিনে তিনি আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্যে চলে যান ওপারে। বাবা হারানোর পুরো পাঁচ বছর পূর্ন হল আজ। কারো কাছে মনে হতে পারে পাঁচ বছর অল্প সময় কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যে কত বছর, কত যুগ থেকে বাবাকে দেখি না!
কত বছর থেকে বাবার সঙ্গে কথা হয় না! ঈদে মার্কেট যাই না! ঈদের নামাজ পড়তে যাই না ! আড্ডা হয় না , ঘুরতে যাই না! মনের কথাগুলো বলতে পারি না! বাবার কথা বা স্মৃতি মনে পড়লেই বুকটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে আর যখন ভাবি যে বুকের মধ্যের সেই ফাঁকাটা আর কোন দিনই পূর্ন হবেনা তখনকার কষ্ট/যন্ত্রনা যে কতটাই যে বিশাল তা বুঝাতে পারবো না।
আসলে যারা পিতা হারা তারাই এটি বুঝতে পারবে। বাবা হারানোর কষ্ট অনেক নতুন নতুন কষ্টের সৃষ্টি করে কারন ঈদ এলেই বাবা হারানোর ফলে মায়ের ও বোনের কষ্ট ও যন্ত্রণাগুলো দেখাও অনেক কষ্টের !! বাবাকে হারানোর কষ্ট কি শুধুই হারানোর কষ্ট না এ কষ্টের গভীরতা অনেক বিশাল। বাবাকে নিয়ে লিখতে গেলে কখনেই শেষ হবে না কারন আমার সমস্ত স্মৃতির বেশীর ভাগ অংশই বাবাকে নিয়ে । আমার জীবনের প্রথম - শেষ এবং শ্রেষ্ট বন্ধু শুধুই বাবা !!
বাবাকে ছাড়া পাঁচটি বছর পার হলো ৯টি ঈদ চলে গেল কিন্ত এত চেষ্টা করেও ঈদ এলেই বাবা ভুলে থাকতে পারি না! বাবাকে বলতে ইচ্ছে করে কেমন আছো তুমি, তুমি কি আমার, আম্মুর ও আপুর ডাক গুলো শুনতে পাও, আমাদের দোয়া, দান, সদকা গুলোর সওয়াব গুলো কি তোমার কাছে পৌচ্ছায়। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই বাবা সাথে ঈদ বাজার করা, ঈদগাহে যাওয়ার অভ্যাস। প্রায় ২০ বছরের স্মৃতি কি ভুলা যায় ! এই বাধন যে রক্তের এই বাধন যে পিতা ও পুত্রে।
বাবা চলে যাওয়ার পর থেকেই ঈদগুলো এখন আর ভালো লাগে না ঈদগুলো এখন আনন্দের বার্তা না নিয়ে আসে কষ্টের বার্তা! মনে আছে ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে আমাদের গ্রামের ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়তে যাওয়া। আর কত কি সেই সময় বিশেষ করে চাঁদ রাতে আমি আর আব্বু বের হতাম গেঞ্জি কিনতে কিন্ত গেঞ্জি কেনা আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না মূল উদ্দেশ্য ছিল রংপুর জাহাজ কোম্পানির মোতাহার প্লাজায় গিয়ে কাবাব খাওয়া। অন্য দিন নামাজ না পড়লেও ঈদের দিন খুব সকালে উঠে বাবা সাথে ফজরের নামাজ আদায় করে রাস্তায় হাটতে বের হতাম তারপর বাসায় এসে দেখতাম এক চুলায় রান্না হচ্ছে সেমাই আরেক চুলায় গরম করা হচ্ছে পানি কারন আগের রোজার ঈদগুলি হতো শীতকালে।
বাবা গোসল করেই তাড়া দিত আমাকে গোসল করার জন্য আমি গোসল শেষ করেই দেখতাম বড় আব্বা ও জেঠাতো ভাই এসেছে তারা সহ সকলে সেমাই খেয়ে আমার ছোট চাচা , চাচাতো ভাই সহ সকলে রওনা হতাম ঈদ এর মাঠের দিকে । ঈদ মাঠে আমরা সকলে এক সাথে বসতাম আমি বসতাম বাবার সাথে ।এখনকার মতো তখন অতটা আধুনিকতা ছিল না । বাবা একটা দ্বিতীয় শ্রেনীর চাকুরী করতো ২০ রমজানের পর বেতন পেতো তার পর আমরা ঈদের মার্কেট করতাম বাবা তেমন কিছুই না কিন্ত আম্মুর জোর করাতে মাঝে মাঝে নিতো । সরকারী চাকুরীর সুবাধে বাবাকে দেখেছি খুব নিয়ম শৃঙ্খলাময় জীবন যাপন করতে । সকালে ফজরের নামাজের পর হাটতে বের হতো এর পর বাসায় এসে নাস্তা করে অফিসে যেত অফিস থেকে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার বিকেলে চেম্বারে বসতো তারপর রাতে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়তো।
দিন রাত পরিশ্রম করতো আমাদের জন্য। নিজের সব শখ-সুখ বিসর্জন দিতো আমাদের জন্য। বাবা কে নিয়ে বাবার স্মৃতিগুলো কে নিয়ে লিখলে কখনো শেষ হবে না। কতগুলোই বা লেখা যায়। বাবা চলে যাওয়ার পর অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর ফজরের নামাজ মসজিদে পড়া হয় না বাসাই পড়া হয়! ঈদের দিন সকালের গোসলে আম্মু তাড়া দিলেও বাবার তাড়া দেয়াটা মিস করি! ঈদের মাঠে এখন চাচাতো ভাইদের সাথে চলে যাই! বাবার সাথের সেই দিনগুলি খুব মিস করি! বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে! জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করে! বলতে ইচ্ছে করে বাবা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি ছাড়া ঈদগুলি যেন ফ্যাকাসে মনে হয়! তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে কোন ঈদ ভালো কাটে নাই! জানি আর কোনদিন কাটবেও না! বাবাকে আর না পাওয়ার বেদনা গুলোকে সাথী করে নিয়ে আমাকেও একদিন চলে যেতে হবে। কারন মৃত্যুর স্বাদ তো সকলেই পেতেই হবে।
তার পরও মনে পড়বে প্রিয় বাবাকে। আজকের মতো বিশেষ কোন দিনে বা দিবসে বা যখন একা থাকবো তখন। লিখতে আমার কখনো হাত কাপে না বা খারাপ লাগে না। কিন্ত বাবা সম্পর্কে কয়েকটা লাইন টাইপ করতে গিয়েও আমার হাত কাপে আর কান্না পায়! কিন্তু এটা সত্য ভালবাসার প্রিয় মানুষকে হারানোর পর স্মৃতিগুলোকে বা হারানোর পরবতীঁ অভিজ্ঞতাকে লিখতে কাঁদতেই হবে! ঈদ সকলের ভালো যাক আর কিছু লিখতে চাই না নিজের কষ্ট আর বাস্তব অভিজ্ঞতার কিছু অংশ শেয়ার করলাম। অবশেষে দোয়া করি, আল্লাহ যেন তোমাকে জান্নাতুল ফিরদউস দান করে। এবং এটাও দোয়া করি যেন পরকারে আল্লাহ্ আমাদের তোমার সাথে মিলিত করেন। পৃথিবীর সকল বাবারা সুখে থাক আর যে সকল বাবারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের সকলকে আল্লাহ জান্নাত দান করুক। - আমিন