Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মাদারীপুরের ২৪ যুবক লিবিয়ায় মানব পাচারকীদের কাছে বন্দি


আগামী নিউজ | মাসুদ রেজা ফিরোজী, মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৬, ২০২১, ০৬:০৬ পিএম
মাদারীপুরের ২৪ যুবক লিবিয়ায় মানব পাচারকীদের কাছে বন্দি

ছবি সংগৃহীত

মাদারীপুরঃ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৪ যুবক লিবিয়ায় মানব পাচারকীদের কাছে বন্দি অবন্থায় রয়েছেন। এই যুবকদের বন্দি করা অবস্থায় শারীরিক নির্যাতন করেছে সেই ভিডিও ধারণ করে পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদারীপুর সদর থানা পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে একজনকে আটক করেছে।

ভুক্তভোগীদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে পরে তাদের বিদেশে পাঠানোর কথা বলে পরিবারের কাছে, এভাবে দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের দালালি কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। দরিদ্র পরিবারগুলো এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। মোটা বেতনের চাকরি দেওয়ার কথা বলে এসব দালাল চক্র বিভিন্ন দেশে মানুষদের পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে দিনের পর দিন। তাদের অনেককে জীবন দিতে হচ্ছে অথৈ সমুদ্রে কিংবা শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়ে।

সোমবার (৩ মে) থেকে লিবিয়ায় এসব চক্রের হাতে আটক রয়েছে মাদারীপুরের ২৪ জন যুবক। আটক অবস্থায় নির্যাতন করে সেসব ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা দাবি করছে এমন অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, লিবিয়ার একটি ঘরে বন্দি করে শারীরিক নির্যাতন করে টাকা দাবি করছে মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুলাইল ইউনিয়নের চাছার গ্রামের এরশাদ হোসেন জনি নামে এক যুবককে।  

মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চাছার গ্রামে গিয়ে জানা যায়, মাদারীপুরের ওই গ্রামেরই ৪ যুবকসহ ২৪ জনকে বন্দি করে নির্যাতন করে চাওয়া হচ্ছে টাকা।

স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার চাছার গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ খান ইউছুব এলাকার খুব পরিচিত দালাল। সে ৪/৫ বছর যাবৎ মানব পাচারের সাথে সংযুক্ত আছেন। তার মাধ্যমে ৩ শত যুবক ইতোমধ্যে লিবিয়ার পথে পাড়ি জমিয়েছেন। বেশির ভাগ যুবক সাগর পথ পাড়ি দিয়ে ইতালী পৌঁছেছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে আসছে এ সব লোকজন পাঠাতে। জাহিদ খানের কাজ হলো মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব যুবক বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তাদের সংগ্রহ করা। প্রত্যেকের সাথে চুক্তি হয় ৮ থেকে ৯ লক্ষ টাকার। লিবিয়া রুট হিসেবে তারা ব্যবহার করে থাকে।

আবার সেখান থেকে অবৈধ পথে ইতালী যাচ্ছে। মাদারীপুরের যে সকল লোকজন লিবিয়া গেছেন জাহিদ খান এর মাধ্যমে তাদের অনেকে এখনো যেতে পারেনি। তারা এখন লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে অবস্থান করছে। সর্বশেষ তার মাধ্যমে যাওয়া ২৪ জন যুবক লিবিয়ার আটক করে এই চক্রের সদস্যরা টাকার জন্য নির্যাতন করছে। এলাকার প্রভাবশলী হওয়ায় জাহিদ খানকে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছে না। তবে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বুধবার সদর থানা পুলিশ এই জাহিদ খানকে ৫টি পাসপোর্টসহ আটক করেছে।

সদর উপজেলার ধুলাইল ইউনিয়নের ৪ যুবক লিবিয়ায় এখন বন্দি। এরা হচ্ছে চাছার গ্রামে এরশাদ হোসেন জনি মিয়া ও হিফজু হাওলাদার। এছাড়াও ধুরাইল ইউনিয়ন সরদারকান্দি গ্রামে মো. আসাদুল খান এবং মো. জাহিদুল ইসলাম। মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বাকি ২০ জনের বাড়ি। লিবিয়ার মানব পাচারকারী সদস্যরা বন্দিদের নির্যাতনের সেই ভিডিও তাদের পরিবারের কাছে পাঠায়। টাকা না পেলে বন্দিদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এতে পরিবারের লোকাজন আতঁঙ্কে মধ্যে দিন পার করছেন।

আটক হিফজু হাওলাদারের বাবা হাবু হাওলাদার বলেন, আমি আমার ছেলেকে জাহিদ খান ইউছুফ এর মাধ্যমে গত দুমাস আগে লিবিয়া পাঠাই। তার সাথে আমার ৮ লক্ষ টাকা চুক্তি হয়। ২ লক্ষ টাকা আমি ইতোমধ্যে তার কাছে দিয়েছি। বাকি টাকা লিবিয়া যাওয়ার পর দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ২দিন ধরে আমার ছেলেসহ মোট ২৪ জন লিবিয়ার মানব পাচারকারীদের হাতে আটক রয়েছে। তাদের নির্যাতন করে সেই ভিডিও পাঠিয়ে টাকা দাবি করছে। আমরা গরীব মানুষ এতো টাকা কোথায় পাবো? আমি আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় দেখতে চাই।

মাদারীপুর সদর থানার এসআই মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মানব পাচারের অভিযোগ জাহিদ খানকে আটক করা হয়েছে। এসময় তার কাছ থেকে ৫টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আদালতে প্রেরণ করা হবে।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। একজনকে আটক করা হয়েছে।

আগামীনিউজ/এএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে