মাদারীপুরঃ প্রতি বছর কৃষি জমি দখল করে নিয়ে সেই জমিতে গড়ে তুলছে নতুন নতুন ইটভাটা। ভাটার আগ্রাসনে হারিয়ে যাতে বসছে ৪ ফসলি জমি। ফলে এই জেলায় দিন দিন উৎপাদন কমছে খাদ্য উদ্বৃত্ত। এদিকে রহস্যজনক কারণে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে বলে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছর দশেক আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা গ্রামে মাত্র ২/৩টি ইটভাটা ছিলো। এখন ওই এলাকায় গড়ে উঠেছে কমপক্ষে ১০টি ইটভাটা। এইসব ফসলি জমি দখল করে নিয়ে প্রভাবখাটিয়ে মালিকরা ইটভাটা তৈরী করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ করেন, এ বিষয় জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগিরা।
মদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা গ্রামের বাসিন্দা মো: আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে জানান, তাদের জমিতে সম্প্রতি স্থানীয় ইটভাটার মালিক রহিম খান ভাটায় ইট প্রস্তুতের জন্য জোরপুর্বক মাটি কেটে নিয়েছে। এ বিষয় উল্লেখ করে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মাটি কেটে নেয়ার ফলে বিলিন হয়ে গেছে তিন ফসলি কৃষি জমি। এরপরও ফসলি জমি মাটি কেটে নিচ্ছে ভাটা মালিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক জানান, ভাটা মালিকদের সাথে প্রভাবশারীদের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। একারণে তারা বছরের পর বছর এই অনিয়ম দেখেও কোন ধরনের কার্যকরি ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসব ইট ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্রও নেই।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো: মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, কৃষি ও কৃষি জমি বিনষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইটভাটা। বিগত এক দশকে মাদারীপুরের অতি উর্বর ৪ ফসলী ১২ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হাজার হেক্টর কৃষি জমির এক দশমাংশ জমিতে গড়ে উঠা শতাধিক ভাটা প্রত্যক্ষভাবে ধ্বংস করেছে কৃষি জমি। এছাড়া ভাটার দূষণ ও বিরুপ প্রভাবে আশপাশের জমির ফসলহানি হচ্ছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরই বাড়েই চলছে ভাটার সংখ্যা। আর এসব ইটভাটার বেশির ভাগই স্থাপন করছে ফসলি জমি বা এর পাশ ঘেঁষে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৩ এর ৮(১)(ঘ) তে রয়েছে কৃষি জমিতে কোন ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা। শুধু তাই নয় ওই আইনের ৩(ক) তে আরো বয়েছে নির্ধারিত সীমা রেখার (ফসলী জমি) ১ কিলোমিটারের মধ্যেও কোন ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা। তাছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ ভাটা মালিকরা লংঘন করছে বলে এমন অভিযোগ আছে।
জেলা প্রশাসেন তথ্য মতে, মাদারীপুরের ৪টি উপজেলায় বর্তমানে লাইসেন্স প্রাপ্ত ৭৪ টি ইটভাটা আছে কিন্তু অবৈধ ইটভাটা মিলিয়ে শতাধিক ইটভাটা রয়েছে।
এব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, পরিবশ অধিদপ্তর তদন্ত করে ইটভাটা স্থাপনের ছাড়পত্র দিলে জেলা প্রশাসন সে মোতাবেক লাইসেন্স প্রদান করে। তবু ফসলী জমিতে ইটভাটা ও অবৈধ ইটভাটা স্থাপন করেছে তদন্তে পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন বিষয় নিয়ে ইটভাটা মালিকরা ও ইটভাটা সমিতির নেতারা সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।
আগামীনিউজ/এএস