চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ জেলার ভোলাহাটে হলি আর্টিজেন হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জঙ্গী সারোওয়ারের পরিবার পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়ি। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। আর প্রকল্পের বাড়ি দেওয়া নিয়ে নানা অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যদিও প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা বলছেন নিয়ম মেনেই দেওয়া হয়েছে এসব বাড়ি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিট হলি আর্টিজান রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার অন্যতম মাষ্টার মাইন্ড ও অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন সারোয়ার জাহান ওরফে মানিকের নাম। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের শর্তানুযায়ী ভূমিহীন কিংম্বা দুই শতকের নিচে জমি থাকা পরিবার পাবেন এই প্রকল্পের বাড়ি। সে অনুযায়ী জঙ্গি সারোয়ারের আপন ভাই মোঃ মনিরুল ইসলামে পৈত্রিক সম্পত্তি ১৪ শতকের বেশি থাকা সত্ত্বেও; কিভাবে তিনি বাড়ি পেলেন এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে সমালোচনার ঝড়। শুধু এটাই নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া বাড়ি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের রয়েছে নানা অভিযোগও।
অথচ জঙ্গি সারোওয়ারের ভাই মনিরুল বাড়ির আবেদন না করলেও; তাকে দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের এই বাড়ি। এতে ক্ষুব্ধ বঞ্চিত ও প্রকৃত ভূমিহীনরা। অপরদিকে, জঙ্গি পরিবারকে বাড়ি দেওয়ার বিরোধিতা করায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং চেয়ারম্যানদের রোষানলে স্থানীয় আওয়ামীলীগের একটি ত্যাগী পরিবার।
শুধু তাই নয়; গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ায় এবং প্রতিবাদ করায় নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধামকিও প্রদান করছেন ইউএনও। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন উত্তপ্ত ভোলাহাটের রাজনৈতিক অঙ্গন। চলছে পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও।
জঙ্গী সারোওয়ারের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়ি দেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল গাফ্ফার মুকুল ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন শাহ্।
তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ও প্রশাসনকে জানানোর পরও; এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করায় পক্ষান্তরে জঙ্গিবাদকেই উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তবে, অভিযুক্ত ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মশিউর রহমান দায় চাপালেন জনপ্রতিনিধিদের উপর। জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই জঙ্গী সারোওয়ারের ভাই মনিরুল ইসলামকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়ি দেয়া হয়েছে। আর জঙ্গি পরিবারকে বাড়ি দেওয়ার বিরোধিতা করায় ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রাব্বুল হোসেনের রোষানলে স্থানীয় আওয়ামীলীগের একটি ত্যাগী বিধবা আকতারা বেগমের পরিবার। কেননা, ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভুজা এলাকায় বিধবা আকতারা বেগমের দোতালা মার্কেটের সামনে এই প্রকল্পের একটি বাড়ি তৈরী করায় মার্কেটে যাওয়া যাবে না এবং মার্কেটটি কেউ ভাড়াও নিবে না। এতে ব্যাপাক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত আকতারা জানান, মার্কেটের সামনে জায়গা ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করি এবং প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ঐ ফাঁকা জায়গা ব্যবহারের সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্রোশমূলকভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত জায়গায় এই প্রকল্পের একটি বাড়ি তৈরী করে মার্কেটের ভবিষ্যত নষ্ট এবং আমাকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলেছে। আমি এঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রতিকার চাই।
আর ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রাব্বুল হোসেন জানান, নিয়মানুযায়ী শুধুমাত্র ভূমিহীন ও দরিদ্ররাই বাড়ি পেয়েছে। তবে জঙ্গি সারোওয়ারের পরিবারকে বাড়ি দেওয়া কেন? এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কেউই। আর আক্রোশমূলক মার্কেটের সামনে এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত জায়গায় এই প্রকল্পের একটি বাড়ি তৈরীর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাজের বিরোধিতা করবে, আর আমরা ক্ষমতা নিয়ে বসে থাকবো, তাতো হলে পারে না।
জানা গেছে, প্রথম দফায় ভোলাহাট উপজেলায় ১৬০টি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আরও ৪১৬টি বাড়ি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
আগামীনিউজ/এএস