Dr. Neem on Daraz
Victory Day

একজন হার না মানা অপু


আগামী নিউজ | শেরপুর জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২১, ০৩:৫১ পিএম
একজন হার না মানা অপু

ছবি: আগামী নিউজ

শেরপুর :  জেলা শহরের চকপাঠক মহল্লার নওশেদ আলী ও তকিরন নেছার তৃতীয় ছেলে রবিউল ইসলাম অপু (২৮)। তিনি পেশায় একজন ট্রাকচালক ছিলেন। টগবগে এই বয়সে তার আনন্দ-উৎসাহ নিয়ে দিন কাটানোর কথা। সমাজের আর দশটা সাধারণ যুবকের মতো বিয়ে করে সংসার সামলানোর কথা। কিন্তু এক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় সব স্বপ্ন। সাত বছর ধরে তিনি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। যেন হুইল চেয়ারই তার সঙ্গী এখন। বৃদ্ধ মা-বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে। সে স্বপ্ন আজ অধরাই থেকে গেল।

সড়ক দুর্ঘটনা অপুকে থামিয়ে দিলেও থামাতে পারেনি তার উদ্যোগকে। তিনি হুইলচেয়ারে বসে বাড়িতে শুরু করেছেন কবুতর পালন। তা আবার অনলাইনে বেচাকেনা করেন। তার খামারে এখন প্রায় ৫০ জোড়া কবুতর আছে। যেখানে নানা জাতের ও নানা দামের কবুতর আছে। 

তার খামারে বর্তমানে সাদা মুম্বাই, বিউটি খোমা, আর্চ এন্ধেসঢ়;জল, মুক্ষী, চিলা, কালদম, রেসার, গিরিবাজ, কিং, বোখরাসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের কবুতর রয়েছে। তবে তিনি তার শখের খামারটিকে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও বড় করতে চান। 

২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রবিউল ইসলাম অপু চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হলে মেঘনা সেতু এলাকায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার স্বীকার হন। ভেঙে যায় ঘাড়ের দুটি স্পাইনাল কট। এরপর ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়ি ফিরে আসেন। চিকিৎসক অপুকে বলেছিলেন, চার-পাঁচ মাস ব্যায়াম করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেই ভুল চিকিৎসা কেড়ে নিয়েছিল অপুর সব রঙিন স্বপ্ন।

অপুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তিনি পুনরায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে যান। তখন তাকে অন্য আরেকজন চিকিৎসক থেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী অপু থেরাপিও শুরু করেন। কিন্তু টাকার অভাবে মাত্র কয়েকটি থেরাপি শেষে তাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে পুনরায় শেরপুরে ফিরে আসতে হয়।

এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম অপু বলেন, চিকিৎসকের একটি ভুল সিদ্ধান্ত আমার জীবনের সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। হয়তো ওই সময় সঠিক চিকিৎসা পেলে আমি অন্তত মোটামুটি চলাফেরা ও জীবন যাপন করতে পারতাম। এখন দুহাত দিয়ে ভাত তুলে খেতে পারি না। একদম নড়াচড়া করতে পারি না। প্রস্রাব পায়খানা হুইল চেয়ারেই করতে হয়। কারণ, অপচিকিৎসায় আমার ঘাড়ের স্পাইনাল কর্ট নষ্ট হয়ে গেছে। পায়ে বিষাক্ত পোকা, মশা-মাছি কামড় দিলে টের পাই না। অনেক সময় পোকার কামড়ে পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। যা-ই হোক, এভাবে কারও বোঝা হয়ে চলতে
চাই না।

হুইল চেয়ারে বসে কবুতর পালনের অভিজ্ঞতা নিয়ে অপু বলেন, আমার খামারে লং ফেস এক জোড়া কবুতরের দাম ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া রয়েছে হাইস পিজন, যার দাম ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আমি যেহেতু চলাফেরা করতে পারি না, সেহেতু অনলাইনেই কবুতর বেচাকেনা করি। 

আমার খামারে বর্তমানে সাদা মুম্বাই, বিউটি খোমা, আর্চ এন্ধেসঢ়;জল, মুক্ষী, চিলা, কালদম, রেসার, গিরিবাজ, কিং, বোখরাসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের কবুতর রয়েছে। তবে সরকারি কোনো সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে এ খামারকে আরও বড় করব।

অপুর মা তকিরন নেছা বলেন, আমার দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে অপু সবার ছোট। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এক সড়ক দুর্ঘটনা সবকিছু তছনছ করে দিল। অপুকে সব সময় চোখে চোখে রাখতে হয়। কখন তার কী প্রয়োজন হয়। কারণ, সে একা চলতে পারে না, হুইলচেয়ারে করে তাকে এদিক- সেদিক নিতে হয়। মুখে তুলে খাওয়াতে হয়। প্রয়োজনীয় সব কাজ সে হুইলচেয়ারেই করে। অপুকে নিয়ে আমাদের অনেক চিন্তা, আমরা আর কয়দিন বাঁচব। 

এরপর অপুর কী হবে ? অপুর বাবা নওশেদ আলী বলেন, অপু শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও তার মনের জোর অনেক। সে হুইলচেয়ারে বসে কবুতরগুলোর দেখাশোনা করে। পাশাপাশি আমি ও অপুর মা নিজেও সারাক্ষণ খামারের পরিচর্যা করি। যদি সরকার বা কোনো এনজিও সংস্থা অপুর দিকে সুনজর দিত, তাহলে অপু তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এই কবুতরের খামারটি আরও বড় করতে পারতো।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই বলেন, আমরা অনেক সময় দরিদ্র খামারিদের সরকারি অনুদান দিয়ে থাকি। অপুর বিষয়ে আমরা পজিটিভ। তার বাড়ি সরজমিনে পরিদর্শন করে সহযোগিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

আগামীনিউজ/মালেক

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে