কুড়িগ্রাম: নদী বেষ্টিত রাজীবপুর উপজেলার নদ-নদী গুলোতে পানির প্রবাহ নেই। জেলা শহর কুড়িগ্রাম ও পাশ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলায় নৌপথে যাতায়াত করতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে লাখো মানুষ।
পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মক ভাবে।নৌ পথে অতিরিক্ত সময় লাগছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে।সময় মত গন্তব্যে পৌছতে না পারায় বিঘ্ন ঘটছে দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজকর্মে।
ব্রহ্মপুত্র নদে পানির অভাবে নাব্যতা সংকট শতাধিক ডুবোচর জেগে ওঠায় প্রায় ২০টির মতো নৌপথ বন্ধ হওয়ার পথে। কিছু নৌপথ ইতিমধ্যে বন্ধও হয়ে গেছে।
নভেম্বর মাস থেকেই ব্রহ্মপুত্র নদ ও এর শাখা নদী গুলোর পানি কমতে শুরু করে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নৌ চলাচলের জন্য পানির স্বাভাবিক গভীরতা কমে যায়।এতে নৌকা চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হয়।
সরেজমিন রাজীবপুর থেকে নৌপথে চিলমারী নৌরুট ঘুরে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের নৌপথ গুলোতে পানি না থাকায় যেদিকে চোখ যায় শুধু বালু চর। হঠাৎ দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটাই ব্রহ্মপুত্র নদ। দুই ঘন্টার নৌপথে পানি না থাকায় এখন সময় লাগছে প্রায় তিন ঘন্টা।
রাজীবপুর উপজেলা শহর থেকে নৌঘাটে পৌঁছতে প্রায় ২ কিলোমিটার বালুচর পারি দিতে হয়।এর পর চিলমারী অথবা গাইবান্ধা গামী নৌকায় উঠে পারি দিতে হয় বিশাল নৌপথ। রাজীবপুর থেকে চিলমারী ঘাটে পৌছতে প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা সময় গাইবান্ধা পৌছতেও প্রায় একই সময় লাগছে। বর্ষা মৌসুমে এই পথ গুলোতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।
গাইবান্ধা রুটে ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নামানো হয় যাত্রীদের তপ্ত বালুরচরে কেউ হেটে আবার কেউ ঘোড়ার গাড়িতে করে বালাশি ঘাটে গিয়ে শহরে যাওয়ার গাড়ি উঠতে হয়। এপথে যাতায়তকারী শিশু নারী ও বৃদ্ধ যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পরে। রাজীবপুর নৌঘাটে নেমে উপজেলা শহরে পৌঁছাতেও একই ধরনের দুর্ভোগে পরে যাত্রীরা।
রাজীবপুর থেকে নৌপথে চিলমারী যাতায়াত করেন আজিজুর রহমান। তার কাছে এই নৌরুটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নৌকায় যেতে সময়ও লাগছে বেশি। বাতাস উঠলে বালুর কারনে কিছুই দেখা যায় না। নৌকা আটকে গেলে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। তারপর নৌ চলাচলের উপযোগী পানির দিকে ঠেলে নিয়ে যাত্রীদের তুলে গন্তব্যে নিয়ে যায়। এতে প্রচুর সময় ব্যয় হয়।
রাজীবপুর উপজেলার রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর স্থানীয় মানুষ চিলমারী ও গাইবান্ধা নৌরুটে চলাচলে দূর্ভোগ পোহালেও ইজারাদার বা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এই নৌরুট দুটি খননের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
গাইবান্ধা ও চিলমারী নৌরুটের নৌচালক সোনা মিয়া বলেন পানি কম থাকায় নৌকা চালানো খুব কষ্ট হয়। ২ ঘন্টার পথ ৩ /৪ ঘন্টা সময় লাগে। অনেক সময় যাত্রীদের সাথে ঝগড়া হয়।
মে মাসে নদের পানি কিছুটা বৃদ্ধি শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে নৌকা চলাচল করে।এর পর পানি কমতে শুরু হয় পরবর্তী ৭ মাস পানি কমতে শুরু করলে দূর্ভোগ পোহায় যাত্রী ও নৌচালকরা।
রাজীবপুর উপজেলার নৌকা ব্যাবসায়ী তৈয়ব আলী বলেন, নদীতে পানি কম সিরিয়াল কিনতে এখন টাকা বেশি লাগে সে তুলনায় যাত্রী হয় না নৌকা ব্যাবসায় লাভ হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন এই নদী পথ গুলো ড্রেজিং করা দরকার।
রাজীবপুর উপজেলা নৌ ঘাট সাব ইজারাদার আলম মিয়া বলেন,নদীতে পানি কম থাকায় গাইবান্ধা ও চিলমারী যেতে সময় বেশি লাগছে।সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারায় এতে যাত্রীদের কষ্ট বেড়েছে। কর্তৃপক্ষের এই নৌ পথ গুলো খননের করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
আগামীনিউজ/মালেক