বগুড়াঃ আবহমান গ্রামবাংলার ৪শ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে করোনাকালেও অনুষ্ঠিত হয়েছে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলা।
স্থানীয়ভাবে ‘মাছের মেলা’ নামে সুপ্রসিদ্ধ এই মেলা প্রতিবারের মত এবারো বগুড়া জেলার ১১ কিলোমিটার পুর্বে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহ এলাকায় এই মেলার আয়োজন করা হয়।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ইছামতী নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় একদিনের এই মেলায় বসে হরেক রকম পসরা আর লাখো মানুষের সমাবেশ।
প্রতিবারের মত এবারো মেলায় প্রায় ৪শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। এই মেলার বড় আকর্ষণ বড় আকৃতির দেশীয় প্রজাতির মাছ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় মাছ কিনতে ক্রেতারা এই পোড়াদহ মেলার জন্য অপেক্ষা করেন। এবারও মেলার আয়োজন আর বিকিকিনির কোন ঘাটতি ছিল না। করোনাকাল হওয়ায় প্রশাসন এবং স্থানীয় আয়োজকরা নিয়েছিলেন বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ ছিলো ৬৫ কেজি ওজনের বাঘাআইড়। যেটি ১হাজার ৫শ টাকা কেজি দরে দাম হাকাচ্ছিলেন বিক্রেতা আবুল হোসেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত সেটি বিক্রি হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, এবার ১২ জন আড়তদারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির বড় আকৃতির বাঘাআইড়, বোয়াল, রুই, কাতল, বিগ্রেডসহ নানা জাতের প্রায় ২শ থেকে আড়াইশ টন মাছের আমদানী হয়েছে।
মাছ ছাড়াও মেলার বড় আকর্ষণ হরেক রকমের মিষ্টি। মেলার মিষ্টি বিক্রেতা আব্দুল লতিফ জানান, ১০ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি বানিয়েছিলাম। ৩শ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এছাড়া মেলায় প্রায় ২শ মণ মিষ্টি বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।
এছাড়া মেলায়, বিভিন্ন ধরনের খাবার, শিশুতোষ খেলনা, বাশঁ ও বেতের হস্তশিল্প, নাগরদোলা, মোটর সাইকেল খেলা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছে।
গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রওনক জাহান আগামী নিউজকে জানান, করোনা কালে মেলা হওয়ায় এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে কঠোরভাবে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় ৪শ বছর পুর্বে ইছামতী নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে এই মেলার আবির্ভাব হয় সন্নাসী পূজাকে কেন্দ্র করে। সেই থেকে প্রতিবছর মাঘ মাষের শেষ বধুবার এই মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। মেলা উপলক্ষ্যে গাবতলী উপজেলাসহ পুর্ববগুড়ার কয়েকটি উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রামে আত্মীয়স্বজন-জামাইদের দাওয়াতের ধুম পড়ে যায়। মেলায় জামাইদের বড় মাছ ও মিষ্টি কিনে নিয়ে যেতে হয় শ্বশুরবাড়িতে। এটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
আগামীনিউজ/এএস