যশোরঃ জেলার কেশবপুরে বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠা ১৬টি ইটভাটার মধ্যে ১০টিই অবৈধভাবে ইট উৎপাদন ও বেঁচাকেনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ ইটভাটা প্রশাসন বন্ধ করার পরের দিন থেকে আবারো চালানো হচ্ছে এর সংস্কার কাজ। ভাটা স্থাপণকালে এলাকাবাসি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়াসহ আন্দোলন সংগ্রাম করে। কিন্তু ভাটা মালিকরা এর কোনো তোয়াক্কা না করে ঊধ্বর্তন কর্তাদের ম্যানেজ করেই চালাচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে চারপাশের ফসলী জমি, রাস্তাঘাট, স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ পরিবেশ।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপণ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ বলছে, আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও ফসলি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপণ করা যাবে না। এছাড়া কোনো সড়ক থেকে অর্ধকিলোমিটার দূরত্বে ইটভাটা স্থাপণ করতে হবে। কিন্তু এ আইন লঙ্ঘন করেই কেশবপুরে ১৬টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের সহকারী কমিশনার মাহমুদ হাসানের তথ্যমতে, উপজেলার সাতবাড়িয়ার মেসার্স আলম ব্রিকস ইন্ডাষ্ট্রিজ, দোরমুটিয়ার মেসার্স কেশবপুর ব্রিকস, কেশবপুর চিংড়া সড়কের শ্রীরামপুর বাজারের পাশের মেসার্স গোল্ড ব্রিকস, মেসার্স গাজী ব্রিকস, সন্ন্যাসগাছার মেসার্স এসএস ব্রিকস ও মেসার্স বিউটি ব্রিকসের লাইসেন্স ও নবায়ন আছে। চলতি বছর থেকে মেসার্স খান ব্রিকস ইন্ডাষ্ট্রিজের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মেসার্স বিউটি ব্রিকস-১, আগরহাটি গৌরিঘোনার প্রাইম ব্রিকস বর্তমান মেসার্স হামজা ব্রিকস, সাতবাড়িয়ার মেসার্স রহমান ব্রিকস, মেসার্স সুপার ব্রিকস, পৌর এলাকার ভোগতীনরেন্দ্রপুরের মেসার্স জামান ব্রিকস, বগার মেসার্স বিএসবি ব্রিকস, বেগমপুরের মেসার্স রিপণ ব্রিকস, বারুইহাটির মেসার্স রোমান ব্রিকস ও মেসার্স প্রাণ ব্রিকসের কোনো কাগজপত্র নেই। এসব ভাটা ঊধ্বর্তন কর্তাদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে চলছে। গত বছর মেসার্স জামান ব্রিকস, মেসার্স রোমান ব্রিকস ও মেসার্স সুপার ব্রিকস উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়। এবছরের শুরুতে এসব ভাটা আবারও পুরোদমে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।
এলাকাবাসির অভিযোগে গত ২০ ডিসেম্বর যশোরের পরিবেশ দপ্তরের নির্বাহী মাজিস্ট্রেট রোজিনা আক্তার অভিযান চালিয়ে মেসার্স সুপার ব্রিকস, মেসার্স রিপণ ব্রিকস ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইরুফা সুলতানার অভিযানে মেসার্স হামজা ব্রিকসের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এ অভিযানের পরের দিন থেকে মেসার্স রিপণ ব্রিকসের সত্ত্বাধিকারী সিদ্দিকুর রহমান এসবের কোন তোয়াক্কা না করে ভাটা সংস্কার কাজ অব্যাহত রাখে। ওই ভাটায় ১/২ দিনের মধ্যে ইট উৎপাদন শুরু হবে বলে অভিযোগ। এছাড়া ওই ভাটায় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।
এলাকাবাসির অভিযোগ, এ উপজেলার ইটভাটাগুলোতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বাড়াতে টায়ার, কাঠ ও ঝুট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পরিবেশ রয়েছে মারাত্নক হুমকির মুখে। সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাটার চারপাশে রয়েছে উচ্চ ফলনশীল কৃষি জমি। ফলে ঘটছে মারাত্নক ফসলহানি। নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট।
এ ব্যাপারে ভাটা মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গাজী ব্রিকসের সত্ত্বাধিকারী আরমান গাজী বলেন, যেসব ভাটার অনুমোদন নেই তা অনুমোদনের জন্যে পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা আছে। অনুমোদন পেলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
যশোর পরিবেশ দপ্তরের নির্বাহী মাজিস্ট্রেট রোজিনা আক্তার বলেন, ইতোপূর্বে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ৩টি ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ অভিযান অব্যাহত আছে।
আগামীনিউজ/এএইচ