ঠাকুরগাঁওঃ জেলায় মাল্টা পাহাড়ি ফল হিসেবে পরিচিত হলেও সমতল ভূমিতেও রয়েছে এ ফলের ব্যাপক সম্ভাবনা। উত্তরের কৃষি প্রধান এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের মালটা। মাটির গুনাগুন ঠিক থাকলে সমতল এলাকাতেও মালটা চাষ করে লাভবান হতে পারেন কৃষকরা এমনটাই জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও রানীসংকেল উপজেলার কারনাইট গ্রামের মালটা চাষি মাহমুদুল হাসান মুকুল, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার আউলিয়াপুর কচুবাড়ি গ্রামের শাহাদাত হোসেন লিপু ও সদরের গাঙ্গর গ্রামের মাল্টা চাষি মুনছুর আলী।
মাহমুদুল হাসান মুকুল জানান,শখের বসে কয়েক বছর আগে বাড়ির আঙ্গিনায় একটি মাত্র গাছের চারা রোপন করেন। এতে বেশ ভালো ফলন দেখতে পেয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ১ একর জমিতে বারি-১ জাতের মালটা চাষ শুরু করেন তিনি। এবার এক একটি গাছে গড়ে প্রায় ১০০-১২০টি করে মালটা ধরেছে।
তিনি জানান,অন্যান্য ফল আবাদের তুলনায় মালটা চাষ লাভজনক এবং খরচও কম। চারা রোপনের দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়।এ ছাড়া কোনো প্রকার কীটনাশক,ফরমালিন বা পেস্টিসাইটের প্রয়োজন হয় না। এ জন্য এটা বিষমুক্ত ফল। তিনি আশা করেন তার এবার মাল্টা বিক্রী করে ১০ লক্ষ টাকা আয় হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ে সদর উপজেলা আউলিয়ারপুরের কচুবাড়ি গ্রামে আর একটি বাগানে গিয়ে দেখা যায় যে সারি সারি গাছে থোকা থোকা মাল্টা। একেকটি গাছে ৮০টি থেকে ১০০টি পর্যন্ত। কোনো কোনোটিতে তারও বেশি। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে অনেক গাছ।
কচুবাড়ি গ্রামের মাল্টা ফলবাগান মালিক শাহাদাত হোসেন লিপু, তিনি কচু বাড়ি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এর সহকারি শিক্ষক। বর্তমানে মাল্টা চাষ করে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন শাহাদাত হোসেন লিপু।
তিনি একা নন, এই এলাকার অনেক চাষি মাল্টা চাষ শুরু করছেন। মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন নতুন নতুন চাষি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৪৫ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা-কমলা আবাদ হচ্ছে। শাহাদাত হোসেন লিপু পেশায় একজন শিক্ষক। শখের বশে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৭ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি বিভাগে যোগাযোগ শুরু করেন।
আগ্রহ দেখে কৃষি বিভাগ তাঁকে মাল্টা-কমলা চাষের প্রশিক্ষণ শেষে বারি মাল্টা-১ জাতের ৭৫টি, ৫টি কমলা লেবু, ২০টি কলম্ব লেবু, ১০টি বাতাবি লেবু চারা দেয়। পরে তিনি চারাগুলো বাড়ির পেছনের দুই বিঘা জমিতে রোপণ করেন। এরপর শুরু হয় পরিচর্যা। গত বছর থেকে বাগানের তিন-চতুর্থাংশ মাল্টা গাছে ফল ধরতে শুরু করে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে কিছু মাল্টা বিক্রিও করেন। ওই ফল খেতে সুস্বাদু হওয়ায় তিনি সে বছর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরও দুই একর জমিতে মাল্টার নতুন বাগান করেন। এ মৌসুমে ফল এসেছে।মাল্টা গাছে সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে বারি মাল্টা-১ গাছে ফুল আসে। আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে ।৫-৬টা মাল্টা ওজনে এক কেজি হয়।
ঠিকভাবে পরিচর্যা করলে একটি পরিণত গাছে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। শাহাদাত হোসেন লিপু বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, গাছে গাছে ঝুলছে সবুজ মাল্টা। লিপু, মাল্টা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত। ফলটি সবুজ হলেও ভীষণ রসাল ও মিষ্টি খেতে। তিনি বলেন, বাগানে মানবদেহে ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশক বা সার ব্যবহার করি না। ভেষজ কীটনাশক তৈরি করে পোকামাকড় দমন করি। লিপু বলেন, আমরা যারা মাল্টা চাষ করেছি, তারা এখনো বাজার সৃষ্টি করতে পারিনি। তাই এলাকার লোকজনের কাছেই প্রতি কেজি মাল্টা থেকে ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি করছি।অথচ বাজারে মাল্টা দুইশত টাকা দরে বিক্রী হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সদরের ফল ব্যবসায়ী আইনুল হক,এ এলাকার বাগানের মালটা দারুণ রসালো এবং বাজার আমদানিকৃত যে কোনো মালটার চেয়ে বেশি মিষ্টি। তাই বাজারে বিক্রি করে ভাল দাম পাওয়া যায়। পাশাপাশি দুইরকম ফলের স্বাদ গ্রহণ করে স্থানীয় ভোক্তারা বলছেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা মালটার মিষ্টতা দেশে উৎপাদিত এই মালটার মিষ্টতার তুলনায় কম। তাদের মালটা চাষের সাফল্য দেখে এলাকার বেকার যুবকরাও মালটা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ঠাকুরগাঁও কৃষি ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন ভৌগোলিক কারণে এ এলাকার মালটা চাষের উজ্জ¦ল সম্ভাবনা রয়েছে।এ মালটা-তে নেই কোন ফরমালিন,নেই কোনো ঝুঁকি।তাই এই অ লের মালটা হতে পরে অনেক জনপ্রিয়। মালটা চাষে আগ্রহী করে তুলতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণ সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আগামীনিউজ/মিথুন