টানা কয়েক দিনের বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয় দফায় জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার ৫ লাখ মানুষসহ গৃহপালিত পশু গরু, মহিষ, ছাগল, হাঁস, মুরগি। বানভাসিদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
বুধবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে জেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) পানি মাপক গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান।
এদিকে দেওয়ানগঞ্জ রেল স্টেশন ও রেল লাইনে পানি উঠায় দেওয়ানগঞ্জ ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেন দু’টি ইসলামপুর পর্যন্ত চলাচল অব্যাহত রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি ভয়াবহ বন্যায় জামালপুরের ৬৮ ইউনিয়নের মধ্যে বর্তমানে ৪২ ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চলতি মাসেই দ্বিতীয় দফা বন্যায় দুর্ভোগের পরিমাণটা বেশি। বন্যা কবলিত এলাকার গুলোর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, চর আমখাওয়া ইউনিয়ন, ইসলামপুর উপজেলার পার্থর্শী, কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পলবান্দা, ইসলামপুর পৌরসভা, গোয়ালের চর, গাইবান্দা, চরগোয়ালীনী ও চরপুটিমারী ইউনিয়ন। মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর, শ্যামপুর, মেলান্দহ পৌরসভা, নাংলা, আদ্রা, ফুলকোচা, ঝাউগড়া, ও ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন। মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা জোড়খালী, বালিজুড়ি ও চর পাকেরদহ ইউনিয়ন। সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা, আওনা, পোগলদিঘা, সাত পোয়া ও কামরাবাদ ইউনিয়ন। বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া, মেরুরচর, নিলক্ষিয়া ও বগারচর ইউনিয়ন। জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর, তুলশিরচর ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, প্রবল পানির তোড়ে ধসে গেছে মাদারগঞ্জ-মাহমুদপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের লালডোবা গ্রামের ৫০ মিটার অংশ। এ অংশ দিয়ে প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করে আশপাশের ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
কড়ইচুড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বাচ্চু জানান, ১৫ জুলাই মাদারগঞ্জ-মাহমুদপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের লালডোবা গ্রামের অংশে পানির প্রবল চাপে বাঁধটির ৫০ মিটার ধসে যায়। ওই ধসে যাওয়া অংশে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে আশপাশের প্রায় ১০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে।
এদিকে বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী, বেলগাছা, চিনাডুলী, কুলকান্দি ইউনিয়নের যমুনার দ্বীপ চরের লোকজন নৌকার অভাবে তাদের ঘরের ধান-চাল এমনকি গৃহপালিত পশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পারছে না।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী বলেন, আগের ৩১০ মেট্রিক টন জিআর চাল বিতরণ সম্পন্ন হয়নি। বিতরণ শেষে পুনরায় চাল বরাদ্দ দেওয়া হবে। দুর্গত এলাকাগুলোতে ৫১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার সরবরাহসহ নগদ পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। বরাদ্দকৃত ত্রাণ দুর্গত এলাকায় বিতরণ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পোঁছে যাবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
নৌকা সঙ্কটে দুর্গতদের উদ্ধার বিষয়ে তিনি বলেন, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যমুনার দুর্গম এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থা করে আটকে পড়া দুর্গতদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আগামীনিউজ/জেএফএস